সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

শিক্ষকদের মারধর ও ভর্ৎসনায় ছাত্রের আত্মহত্যা

শিক্ষকদের মারধর ও ভর্ৎসনায় ছাত্রের আত্মহত্যা

বাগেরহাটের চিতলমারীতে শিক্ষকদের মারপিট, ভর্ৎনা ও স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয়ার অপমান সইতে না পেরে এক স্কুল ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক মহল ও গ্রামবাসীদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নিহতের লাশ উদ্ধার করে আজ সোমবার বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছেন। এ ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চরবানিয়ারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র আশিষ বালা (১৪) গতকাল রবিবার সকালে স্কুলে যায়। শ্রেণী কক্ষে গেলে সহকারী প্রধান শিক্ষক ক্ষিতিষ রায় তাকে ডেকে নিয়ে অফিস রুমের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখেন। পরে তাকে তিরষ্কার করে স্কুল থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনার পর আশিষ দুপুর ১টার সময় বাড়িতে ফিরে ঘরের আড়ায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।

মৃত আশিষের বাবা আনন্দ বালা ও স্কুলশিক্ষক চাচা নিরঞ্জন বালা জানান, গত ২০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ক্লাসে বসে আশিষ খাতায় একটি কবিতা লেখে। এ ঘটনার রেশ ধরে ওইদিন সহকারী প্রধান শিক্ষক ক্ষিতিষ রায় ও অন্য একজন প্রভাবশালী শিক্ষক তাকে মারধর করে স্কুল থেকে বের করে দেয়। পরে শনিবার স্কুলে গেলে পুনরায় তাকে স্কুল থেকে ভর্ৎসনা করে তাড়িয়ে দেয়া হয়। রবিবার আবারও স্কুলে গেলে তাকে রোদে দাঁড় করে রেখে পরে চড়-থাপ্পড় দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয়। এ রকম দফায় দফায় মারপিট ও অপমান সইতে না পেরে আশিষ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

চরবানিয়ারী সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য ভারতী মজুমদার জানান, স্থানীয় গ্রুপিংয়ের প্রতিহিংসায় এ স্কুল থেকে কারণে-অকারণে শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়া হয়। তিনি আরও জানান, গত জুন মাসেও এই স্কুলে বসে মৃতিকা সমাদ্দার নামে নবম শ্রেণির এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে।

চরবানিয়ারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দেয়া শিক্ষার্থী ক্লিনটন ঘরামী, স্বাধীন বড়াল, অভিজিৎ মধু ও সবুজ ঢালী জানান, অভিভাবকদের সঙ্গে দলীয় মত বিরোধের জন্য ১৭ জনকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পীযূষ কান্তি রায় স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।

চিতলমারী উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল জানান, এ ধরনের ঘটনা স্কুলটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তাই প্রশাসনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত্।

চিতলমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এ ধরনের কোন ঘটনার কথা তার জানা নেই।

চরবানিয়ারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পীযূষ কান্তি রায় স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের তাড়িয়ে দেয়ার কথা অস্বীকার করে জানান, নোংরা কবিতা লেখায় আশিষকে অভিভাবকদের নিয়ে স্কুলে আসতে বলা হয়েছিল। এই তুচ্ছ বিষয়টিকে নিয়ে এলাকার একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আরও জানান, স্বুল ছাত্র আশিষ মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

চিতলমারী থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনিসুর রহমান জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। শিক্ষকের বিরুদ্বে অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত চলছে।
 

 

বিডি-প্রতিদিন/ ২৪ নভেম্বর, ২০১৪/ রশিদা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর