শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
সরেজমিন স্বাস্থ্যসেবা (১৯)

নাকে রুমাল চেপে চলতে হয় ওয়ার্ডে

গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল

নাকে রুমাল চেপে চলতে হয় ওয়ার্ডে

গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের পরিবেশ এতটাই নোংরা ও দুর্গন্ধময় যে, আধা অসুস্থ রোগীকে পুরো অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। ওয়ার্ড থেকে শুরু করে হাসপাতালের যেখানেই যাবেন, নাকে রুমাল চাপা না দিয়ে কোনো উপায় থাকে না। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০০ শয্যার এ হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ ও দুর্গন্ধে রোগীরা বিছানায় থাকতে পারছেন না। রোগীর সঙ্গে আসা সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রোগীদের ওয়ার্ড, টয়লেট, বাথরুম নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এ অবস্থা হয়েছে। এ ছাড়া ওয়ার্ডের পাশে এবং জরুরি বিভাগের সামনে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ এবং যত্রতত্র মল-মূত্রের দুর্গন্ধে সবসময়ই নাকে রুমাল চাপা দিয়ে রাখতে হয়। এখানে ডাক্তার, নার্স, কর্মচারী থাকেন না বললেই চলে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কুকুর-বিড়ালের রয়েছে অবাধ বিচরণ। পাশাপাশি বিচরণ রয়েছে চোর এবং দালাল চক্রের। দেখা যায়, বহির্বিভাগে প্রবেশ পথে স্থাপিত তথ্যকেন্দ্রটি তালাবদ্ধ। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এটি কার্যত খোলাই হয় না। রোগীদের বসার চেয়ার এবং বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য ওয়াটার পিউরিফায়ারগুলো ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। হাসপাতালটি ‘নারীবান্ধব হাসপাতাল’ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে তার কিছুই নেই। রোগীদের অভিযোগ, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি মেশিন থাকলেও সেগুলো প্রায় সময়ই হাসপাতালের আশপাশে গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভাড়া খাটানো হয়। ওইসব সেন্টারে রোগীদের পাঠিয়ে দালালরা টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায়। হাসপাতালে ভর্তি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বারী জানান, তিনি হাঁপানি রোগের চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু দুর্গন্ধে বিছানায় টিকতে পারছেন না। পায়খানা-প্রস াবখানা ব্যবহারের অযোগ্য। তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গ্যাসের ওষুধ ছাড়া আর কোনো ওষুধ দেয় না। নাকে রুমাল চেপে ডাক্তাররা রাউন্ডে এসে দ্রুত চলে যান, রোগীর কোনো কথা শোনেন না। ৪০ নম্বর বিছানায় পা ভাঙা অবস্থায় ভর্তি ছিল শিশু জুয়েল। তারা বাবা জাহাঙ্গীর জানান, এক্স-রে এবং অন্যান্য সব পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হয়েছে। ওষুধ, ইঞ্জেকশন সবই বাইরে থেকে কিনতে হয়। আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবু হানিফ বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য নাইট গার্ড পদ না থাকায় হাসপাতাল থেকে প্রায়ই মালামাল চুরি যায়। গাইবান্ধা যুব নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক জিয়াউল হক জনি বলেন, দৃশ্যত হাসপাতালে কোনো চিকিৎসার পরিবেশই নেই। ডাক্তার, নার্স, প্যাথলজিস্ট, কর্মচারী যখন যেমন ইচ্ছা আসছেন, যাচ্ছেন, যা ইচ্ছা তাই করছেন। সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম হাসপাতালের অপরিচ্ছন্নতার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমাদের দুর্বলতা রয়েছে সত্য। অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর