শনিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

বঙ্গোপসাগরে ট্রলারসহ ১৬ জেলে ২৩ দিন নিখোঁজ

শরণখোলায় ঘরে ঘরে কান্নার রোল

বঙ্গোপসাগরে ১৬ জন জেলে নিয়ে (মাঝিমাল্লা) ২৩ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে এফবি মুক্তি-১ নামের একটি মাছ ধরা ট্রলার। এতদিনে ফিরে না আসায় নিখোঁজ জেলেদের ঘরে ঘরে চলছে কান্নার রোল। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জেলেদের স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনরা এসে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মহাজনের বাড়িতে। ট্রলারটি নিখোঁজের সঠিক কোনো কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে ইঞ্জিন বিকল হয়ে এমনটি ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনায় ট্রলার মালিক বিলাশ রায় কালু শরণখোলা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। নিখোঁজ ট্রলার ও জেলেদের উদ্ধারের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর এফবি মুক্তি-১ নামের ওই ট্রলারটি পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের বগী স্টেশন থেকে পাস নিয়ে ১১ ডিসেম্বর ভোররাতে ইলিশ আহরণের জন্য বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে রওনা হয়। ট্রলারে মোট ১৬ জন জেলে ছিলেন। নির্ধারিত সময় ও পাসের মেয়াদ অনুযায়ী ট্রলারটি মাছ শিকার করে ১০-১২ দিনের মধ্যে ফিরে আসার কথা। অতিরিক্ত আরও ১২-১৩ দিন পার হলেও ট্রলারটি ফিরে না আসায় মহাজন ও জেলে পরিবারে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। গতকাল সরেজমিন নিখোঁজ জেলেদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখা যায় করুণ চিত্র। ওই ১৬ জন হতভাগার মধ্যে কারও সন্তান, কারও স্বামী, কারও বাবা, কারও ভাই রয়েছেন। এই স্বজনদের সবার চোখে শুধুই কান্না। জিলবুনিয়া গ্রামের নিখোঁজ ফারুক খানের স্ত্রী বকুল বেগম (৩৫) স্বামীর শোকে অসুস্থ হয়ে এখন হাসপাতালে ভর্তি। একই গ্রামের মধু খানের (১৮) বাবা সুলতান খান (৬০) ও মা জাহানারা বেগমের (৫০) কাছে জিজ্ঞেস করতেই তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ট্রলার মালিক বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদরের পাঁচরাস্তা এলাকার বাসিন্দা বিলাশ রায় কালু জানান, ট্রলার নিখোঁজের বিষয়টি বিভিন্ন জেলে ও মহাজনদের কাছে জানানো হয়েছে। তাছাড়া, সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়ে ইউএনও ও ডিসি বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ওই ট্রলারটিই তার একমাত্র সম্বল। এতে প্রায় ৫০ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। তিনি এখন আর সম্পদের মায়া করছেন না। মানুষগুলোকে জীবিত ফেরত পেতে চান। শরণখোলা উপজেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মজিবর তালুকদার জানান, হয়তো ট্রলারটির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে ভাসতে ভাসতে গভীর সমুদ্রে চলে গেছে। ডাকাতে নিলে অথবা কাছাকাছি কোথাও থাকলে যে কোনোভাবে তার সন্ধান পাওয়া যেত। শরণখোলার ইউএনও অতুল মণ্ডল জানান, আবেদনটি পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তার কপি পাঠানো হয়েছে। ট্রলারটি উদ্ধারে প্রশাসনিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

নিখোঁজ জেলেদের নাম : ট্রলার মাঝি মো. শাহআলম ফরাজী (শাহা মাঝি), জেলে ইউনুচ হাওলাদার, তহিদুল হাওলাদার, শাহজাহান হাওলাদার, বারেক তালুকদার, হেমায়েত হাওলাদার, আলামীন মোল্লা, হালিম হাওলাদার, আবদুলাহ খান, আব্বাস আকন, হাসান সিকদার, ফারুক খান, মধু খান, কামাল হাওলাদার, নাঈম হাওলাদার। এদের সবার বাড়ি শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। এ ছাড়া, ট্রলারের মিস্ত্রি শামছুদ্দিন হাওলাদার। তার বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকায়।

 

 

 

সর্বশেষ খবর