মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

সংখ্যালঘু ১৪ পরিবারের পুনর্বাসন কাজ শুরু, মূল হোতা গ্রেফতার

যুবলীগ নেতা জাকির ও তার ভাইকে খুঁজছে পুলিশ

সংখ্যালঘু ১৪ পরিবারের পুনর্বাসন কাজ শুরু, মূল হোতা গ্রেফতার

উচ্ছেদ করা ১৪ হিন্দু পরিবারের বসতঘর তুলে দিচ্ছে প্রশাসন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বরগুনার তালতলী উপজেলার পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের চন্দনতলা গ্রামে সন্ত্রাসীদের ভয়ে ভিটেমাটি ছাড়া ১৪টি হিন্দু পরিবারকে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। সন্ত্রাসের হোতা আবদুর রশিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে সহযোগিতা করেছে ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা জাকির হোসেন ও তার ভাই আবদুস সালাম। এ দুজনকে পুলিশ খুঁজছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী রশিদের নেতৃত্বে ১৪ পরিবারকে ভিটেমাটি ছাড়া করা হয়। তাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে ১৪টি হিন্দু পরিবারের প্রায় ৯০ সদস্য বরগুনা শহরের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় ভেঙে ফেলা ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ কাজ চলছে। বরগুনা জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম জানান, আমরা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা দু-একদিনের মধ্যেই তাদের পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নিয়েছি। বরগুনা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রধান আসামি আ. রশিদকে গ্রেফতার করেছি। এর সঙ্গে অন্য যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সরেজমিন দেখা গেছে, শূন্য ভিটেয় আছে পুকুর, পাকা টয়লেট। পড়ে আছে কদিন আগে রান্নার কাজে ব্যবহৃত চুলা। শুধু মানুষ নেই। স্থানীয় যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন ও তার বড় ভাই সালামের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়ে নিজেদের জীবন বাঁচাতে হিন্দু পরিবারগুলো বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। জাকির ও সালামের বাড়িতে গিয়ে তাদের ঘর তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। তারা মোবাইল ফোনও বন্ধ করে রেখেছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মানবাধিকার সংগঠন নাগরিক অধিকারের কর্মীরা। এ বিষয়ে নাগরিক অধিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান তারিক পলাশ বলেন, আমাদের কর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। যেখানে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এই হিন্দু পরিবারগুলোর মানবাধিকার রক্ষায় নাগরিক অধিকারের প্রতিবেদন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, আইন শালিস কেন্দ্রসহ সব মানবাধিকার সংগঠনের কাছে পাঠানো হবে। যাতে তাদের ন্যায্য বিচার তারা পেতে পারে।
স্থানীয় বিএনপির সন্ত্রাসী আ. রশিদ ও তার সঙ্গীদের নির্যাতনের মুখে ২০১৩ সালের শুরুর দিকে প্রথম তিনটি পরিবার গ্রাম ছেড়ে বরগুনা শহরে আশ্রয় নেয়। একই কারণে ২০১৪ সালের শুরুর দিকে আরও দুটি পরিবার শহরে আশ্রয় নেয়। সর্বশেষ ১৩ মার্চ চন্দনতলা গ্রাম থেকে নয়টি পরিবার একযোগে ভিটেমাটি ত্যাগ করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় এমপি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা সংখ্যালঘু পরিবারের উপরে সন্ত্রাসী রশিদ গংদের বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হুমকির বিষয়টি পূর্ব থেকেই অবগত থাকলেও তারা সব সময় সমঝোতা করার কথা বলেছেন। এমনকি রশিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা এদের নির্দেশে সমঝোতার মাধ্যমে প্রত্যাহার করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর