সোমবার, ২৫ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
বিভিন্ন স্থানে টর্নেডো

২১ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত আটজনের প্রাণহানি

রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, লক্ষ্মীপুর, হবিগঞ্জ ও কক্সবাজারের উখিয়ায় ঘূর্ণিঝড়ে ২১ সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গাছপালা ও ফসলের। শনিবার রাত ও গতকালের ওই ঝড়ে ঘর-গাছচাপায় রংপুরে দুই, দিনাজপুরে চার এবং জয়পুরহাট ও লক্ষ্মীপুরে মারা গেছেন একজন করে। আহত হয়েছেন শতাধিক লোক। টর্নেডোকবলিত জেলার অনেক এলাকায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সরবারহ। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের খবর-

রংপুর : জেলায় ঝড়ের সময় গাছ ও ঘরচাপায় দুজন নিহত এবং আহত হয়েছেন ১০০ জন। শনিবার রাত ৯টা থেকে অনেক জায়গায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। বিভিন্ন উপজেলায় লণ্ডভণ্ড হয়েছে পাঁচ সহস াধিক বাড়িঘর। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে উঠতি বোরোধানসহ বিভিন্ন ফসলের। উপড়ে পড়েছে গাছপালা। শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় রংপুরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রচণ্ড ঝড়ে নগরীর সাতমাথায় অটোরিকশার ওপর গাছ পড়ে নিহত হন আশরাফুল ইসলাম। অন্যদিকে পীরগাছার মংলাকুটি গ্রামে ঘরচাপায় মারা যান বৃদ্ধা জয়গুন্নেছা। জানা গেছে, জেলার আট উপজেলায়ই টর্নেডো আঘাত হানে। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে সদর, পীরগাছা ও মিঠাপুকুরে। দিনাজপুর : জেলায় ঘূর্ণিঝড়ে দেয়াল ধস ও গাছচাপায় চারজন নিহত হয়েছেন। এরা হলেন- ফুলবাড়ীর খয়েরপুকুর গ্রামের মিতু, নবাবগঞ্জের হাতিশালের সিরাজুল, তার নাতি সাবি্বর ও চিরিরবন্দরের কামারপাড়ার আলেয়া। শনিবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া ঝড়ে রাণীরবন্দর, ঘণ্টাঘর, উচিতপুর, অকড়াবাড়িসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারাত্দক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। ঝড়ের পর থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রামে বন্ধ ছিল বিদ্যুৎ সরবরাহ। নীলফামারী : কিশোরগঞ্জ উপজেলায় সাত মিনিটের টর্নেডোয় তিন সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। শনিবার রাত ৮টার দিকে আঘাত হানা ওই ঝড়ে উপড়ে পড়ে অসংখ্য গাছ। ঘর ও গাছচাপায় আহত হয়েছেন ১০ জন। বিচ্ছিন্ন হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। মাগুরা ইউপি চেয়ারম্যান জানান, তার ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের দুই হাজার পরিবারের তিন সহস্রাধিক কাঁচা-আধপাকা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তায় গাছ উপড়ে পড়ায় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ধান, ভুট্টা ও মরিচ খেত নষ্ট হয়েছে অনেক কৃষকের। গাইবান্ধা : জেলায় শনিবার রাতের ঝড়ে ১০ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি, মসজিদ-মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুতের তারের ওপর গাছ ভেঙে পড়া ও খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় শনিবার রাত ৯টা থেকে গতকাল রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।জয়পুরহাট : শনিবার রাতে প্রচণ্ড ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে দেয়ালচাপায় একজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। নিহত জাহিদুল ইসলাম শহরের হারাইল এলাকায় ভাড়া বাসায় করতেন। তার বাড়ি গাইবান্ধায়। এছাড়া ঝড়ে পাঁচ উপজেলায় তিন হাজার ঘরবাড়ি ও দেয়াল পড়ে গেছে। উড়ে গেছে অসংখ্য টিনের চালা। বৈদ্যুতিক খুুঁটি উপড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ। লক্ষ্মীপুর : জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘূর্ণিঝড়ে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রামের বিদ্যুৎ সংযোগ। রামগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে ঝড়ের সময় ঘরের পাশে আম কুড়াতে গিয়ে আতঙ্কে গৃহবধূ নাসরিনের মৃত্যু হয়েছে। হবিগঞ্জ : শনিবার বিকাল ও রাতে জেলায় দুদফা ঘূর্ণিঝড়ে নবীগঞ্জ উপজেলার ৩৪৮টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। হয়েছে জমির ফসলও। উখিয়া : কক্সবাজারের উখিয়ার ওপর দিয়ে গতকাল সকালে বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়ায় কয়েকটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে ৪-৫ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছপালা ভেঙে পড়ে প্রায় আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।

 

সর্বশেষ খবর