শনিবার, ১ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টেন্ডার সন্ত্রাসীদের সঙ্গে রফা

৩২ কোটি টাকার কাজ বণ্টন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলজিইডিতে টেন্ডার সন্ত্রাসীদের সঙ্গে রফা করে নির্বাহী প্রকৌশলীর কামরায় ৩২ কোটি টাকার নির্মাণকাজ ভাগবণ্টন করা হয়েছে। এ নিয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এলজিইডির স্থানীয় শীর্ষ কর্মকর্তারা এ টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিজয়নগর উপজেলার নুরপুর জিসি থেকে কালীবাড়ি আরএইচডি রোড পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নে ই-টেন্ডার ডাকা হয়। ৮ জুলাই দরপত্র কেনার ও ৯ জুলাই দরপত্র জমার শেষ দিন নির্ধারিত ছিল। সূত্র জানায়, দরপত্র আহ্বানের পর টেন্ডার সন্ত্রাসীরা নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার সমঝোতা করে। দরপত্র জমার কয়েক দিন আগে নির্বাহী প্রকৌশলী টেন্ডার সন্ত্রাসীদের আলোচনা করে রফাদফা করেন। একাধিক ঠিকাদার জানান, ৮ জুলাই দরপত্র কেনার সময় শেষে বিকাল ৫টার পর নির্বাহী প্রকৌশলী, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. মামুন খানসহ টেন্ডার সন্ত্রাসীরা ভাড়া করা লাইসেন্সের পক্ষে ঝালকাঠির মেসার্স মুজাহার এন্টারপ্রাইজের পক্ষে কাজী ফিরোজ, চট্টগ্রামের মেসার্স ইউনুছ এন্টারপ্রাইজের পক্ষে শামীম আহম্মদ, কিশোরগঞ্জের সাহিল এন্টারপ্রাইজের পক্ষে ও মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. খায়রুল হাসান, কুমিল্লার রানা ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে ও পিন্টু কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী আতাউর রহমান পিন্টু, মেসার্স মোস্তফা কামালের স্বত্বাধিকারী মোস্তফা কামাল, মেসার্স ভূইয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হামিদুল হক হামদু ও তিনজন টেন্ডার সন্ত্রাসী নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে সমঝোতা বৈঠক করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রাক্কল্লিত মূল্যের চেয়ে ৯% বা ১০% অতিরিক্ত দরপত্র জমা দেওয়া হবে। এর মধ্যে আলোচনা হয় দুটি কাজের ৫% টাকা প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা অফিস ও সরকারদলীয় নেতাদের দেওয়া হবে। আর দুটি কাজ যে দুজন ঠিকাদার পাবেন তারা উপস্থিত দরপত্রে শিডিউল ও টেন্ডার সিকিউরিটি করেছেন তাদের ১.৫০% প্রায় ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক সরকারি গেজেট (পিপিআর) বহির্ভূতভাবে নির্বাহী প্রকৌশলী কয়টি শিডিউল বিক্রি ও কোন কোন ঠিকাদার টেন্ডার সিকিউরিটি করেছেন তা টেন্ডার সন্ত্রাসীদের অবহিত করেন। ১ নম্বর গ্রুপের প্রায় ১২ কোটি টাকার কাজ মোস্তফা কামালকে ও ২ নম্বর গ্রুপের প্রায় ২০ কোটি টাকার কাজ খাইরুল হাসান ও হামিদুর রহমান হামদুকে বণ্টন করে দেওয়া হয়। ৮ জুলাই নির্বাহী প্রকৌশলী বিভিন্ন ঠিকাদারকে ডেকে নিয়ে এ টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করেন। এর বাইরে কোনো ঠিকাদার অংশগ্রহণ করলে তাদের আগের যেসব কাজ চলছে এবং বিল পাওয়ার অপেক্ষায় আছে তাদের হয়রানি করা হবে বলে হুমকি দেন। এ ছাড়া এ দুটি কাজ নির্দিষ্ট দুজন ঠিকাদারকে দিতে বলেছেন বলে প্রচার চালান। এর বাইরে যদি কোনো ঠিকাদার দরপত্রে অংশগ্রহণ করেন তাহলে ওইসব ঠিকাদারের আগের কাজের বিলে হয়রানি করা হবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দেন বলে একাধিক ঠিকাদার জানান। এর ফলে অনেক ঠিকাদার শিডিউল কিনলেও টেন্ডার বাক্সে জমা দিতে সাহস পাননি। কয়েকজন ঠিকাদার জানান, বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী যোগদানের পর আগের প্রাক্কলিত ব্যয়ের ঊর্ধ্বদরবিশিষ্ট কোনো টেন্ডারের অনুমোদন দেননি। ওই টেন্ডার বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করান। ঠিকাদারদের প্রশ্ন : এ টেন্ডারে ৯% ও ১০% হারের বেশি দরপত্র জমা হলেও তা বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার ডাকা হবে? ঠিকাদাররা টেন্ডারটি বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার আহ্বানের দাবি জানান।

সর্বশেষ খবর