শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বড়াইগ্রামে ৩৫০ মৎস্যজীবী পরিবারের মানবেতর জীবন

বিলে মাছ ধরতে বাধা মারপিট

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরের বড়াইগ্রামে একটি গোষ্ঠীর অব্যাহত হুমকি, মারপিট এবং নৌকা ও জালসহ মাছ ধরার বিভিন্ন সামগ্রী নষ্ট করায় এক সপ্তাহ ধরে বিলে মাছ ধরতে পারছেন না মৎস্যজীবীরা। উপার্জনের একমাত্র পথ বন্ধ হওয়ায় উপজেলার সাড়ে তিনশ’ মৎস্যজীবী পরিবার এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ ব্যাপারে ইউএনওসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, উপজেলার গুরুমশৈল ও মাঝগ্রাম মৌজার মধ্যবর্তী গাড়ইল বিলে ৪০-৫০ বছর ধরে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এবারও তারা জাল, ভাইড়, বৃত্তি, খলসুনসহ বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে আসছিলেন। কিন্তু তাতে বাদ সাধে স্থানীয় কিছু জোতদার। তারা মৎস্যজীবীদের বিলে নামতে নিষেধ করেন। তা না মানায় এক সপ্তাহ ধরে জোতদার ও তাদের লোকজন মৎস্যজীবীদের মারপিটসহ নানাভাবে হেনস্থা করছেন। ভেঙে ফেলেছেন কয়েকটি নৌকা। ৫০টি জাল ছিঁড়ে ফেলাসহ আরও প্রায় ১২০টি মাছ ধরার সামগ্রী নষ্ট করে দিয়েছে। এতে মৎস্যজীবীর লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো অব্যাহত থাকায় মৎস্যজীবীরা বিলে নামতে পারছেন না। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিলের ধারে ভেঙে ফেলা মাছ ধরার নৌকা ও বিভিন্ন সামগ্রী পড়ে রয়েছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছেঁড়া জালের অংশ। মৎস্যজীবীদের সরিয়ে কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরছেন জোতদারদের লোকজন। মালিপাড়া গ্রামের সুরত আলী বলেন, ‘জোতদাররা আমার আটটি ভাইড় ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এখন বেকার বসে আছি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খাব কি তা জানি না।’ আবদুল হালিম বলেন, ‘সপ্তাহ খানেক আগে জোতদাররা আমার নৌকা ও খলসুন ভেঙে দেয়। বৃদ্ধ মা-বাবাসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার আমার আয়ের ওপর নির্ভরশীল। এখন তাদের তিন বেলা খাবার জোগাতে পারছি না।’ মালিপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল হাই জানান, এবার বিলে প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু জোতদারদের ভয়ে মৎস্যজীবীরা বিলে নামতেই পারছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে বউ-বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আযাদ বলেন, এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

সর্বশেষ খবর