শুক্রবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিএনপির ঘাঁটি দক্ষিণাঞ্চলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আ.লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বিএনপির ঘাঁটি দক্ষিণাঞ্চলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আ.লীগ

বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে বিএনপি পর্যদস্ত-বিধ্বস্ত। মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত নেতা-কর্মীরা পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও ভোটের মাঠে তাদের তেমন তত্পরতা দেখা যায়নি। মুখে মাঠে থাকার কথা বললেও বরিশালের কোনো পৌরসভা ভোট কেন্দ্রে শেষ পর্যন্ত ছিলেন না তাদের পোলিং এজেন্ট। এমনকি সবগুলো কেন্দ্রে এবং কেন্দ্রের বাইরে ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও অনেকটা বিএনপি নেতা-কর্মী শূন্য ছিল ভোট কেন্দ্রের ভিতর এবং বাহিরে। ফলাফলও হয়েছে তাই। অর্থাত্ বিভাগের ১৭ পৌরসভার সবগুলোতেই (পিরোজপুর সদরে ইতিপূর্বে  আওয়ামী লীগের আব্দুল মালেক মেয়র নির্বাচিত হন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়) মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। এছাড়া সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মধ্যেও বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের। কেন এই ভরাডুবি’র জবাবে বিএনপি’র বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বিভাগীয় পৌর নির্বাচন মনিটারিং সেলের সদস্যসচিব সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, সংসদ নির্বাচনে যেখানে বিএনপি-আওয়ামী লীগের ভোটের ব্যবধান একবারে কাছাকাছি, সেখানে বিভাগের ১৭ পৌরসভার মধ্যে একটিতেও বিএনপির মেয়র প্রার্থী পাস করবে না- এটা হতে পারে না, এই ফলাফল গ্রহণযোগ্য নয়, দেশের মানুষ এটা বিশ্বাস করে না। বিএনপি এই ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে বলে তিনি জানান। বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ৪ বারের সাবেক এমপি সরোয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করতে গিয়ে সেই ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পথেই হেঁটেছে। দেশের অন্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ কারচুপি, সহিংসতা-মারমুখি নির্বাচনের জন্য জাতির সামনে চিহ্নিত হয়ে গেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে গেলেও বিএনপির একই পরিণতি হতো। তিনি বলেন, পুলিশের উপর হামলা, বিদেশি হত্যা, অর্থনীতির অবনমন এবং বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠির উত্পাত- এসবের মহাঔষধ হলো গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হচ্ছে নির্বাচন। আওয়ামী লীগ সেই মহাঔষধের দিকে না গিয়ে একটি কারচুপির নির্বাচনের মধ্যদিয়ে দেশে আবার অস্থিরতার সৃষ্টি করে শুভ বুদ্ধির পরিচয় দেয়নি। নির্বাচনের মাঠে থাকার পূর্ব ঘোষণা থাকলেও ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রের ভিতরে এবং বাইরে বিএনপির তত্পরতা না থাকার কারণ হিসেবে সাবেক হুইপ সরোয়ার বলেন, নির্বাচনের আগে থেকেই বিএনপির প্রার্থী এবং কর্মীদের উপর ক্ষমতাসীনদের হামলা, হুমকি-ধামকি ছিল। এর সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন যোগ হয়ে বিএনপিকে মাঠেই দাঁড়াতে দেয়নি। দক্ষিণাঞ্চলের ১৭টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার পেছনে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এমপি। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি জিতলেই নির্বাচন সঠিক হয় আর তারা পরাজিত হলেই কারচুপির অভিযোগ করে, এটা তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। এটা শুধু অভিযোগের জন্যই অভিযোগ। সুজন (সু-শাসনের জন্য নাগরিক) বরিশালের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস হোসেন বলেন, বরিশালে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। এটা প্রকৃত গণতন্ত্র নয়। কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে বিএনপির জনপ্রিয়তা কিছুটা কমতে পারে, তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর চেয়ে বিএনপির প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মন্তব্য তার।

সর্বশেষ খবর