শুক্রবার, ৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাতক্ষীরায় ১০ হাজার দুগ্ধ সমবায়ী-খামারি জিম্মি

দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কবলে মিল্কভিটা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরার মিল্কভিটায় দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ১০ হাজার দুগ্ধ সমবায়ী ও খামারি। তারা অভিযোগ করেছেন, প্রান্তিক খামারিদের জিম্মি করে দুধের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করে এই সিন্ডিকেট প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এর প্রতিবাদে তারা গত বুধবার তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনও করেছেন। ভুক্তভোগী দুগ্ধ খামারিরা জানিয়েছেন, অবিলম্বে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করা না গেলে প্রতিষ্ঠানের লোকসান ঠেকানো যাবে না। এ অবস্থায় যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে অধিকাংশ দুগ্ধ খামার। তালা-ডুমুরিয়া দুগ্ধ সমবায় ঐক্য পরিষদের সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ ও জেয়ালা উত্তরপাড়া দুগ্ধ সমবায় সমিতির সভাপতি মুকুন্দ মোহন ঘোষ জানান, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক হিসেবে হামিদুল ইসলাম, ল্যাব টেকনিশিয়ান মোস্তাইন বিল্লাহ ও তার সহকারী রাসেল আহম্মেদ মিল্কভিটায় যোগদানের পর গত এক বছর ধরে খামারি ও সমবায় সমিতির কর্মকর্তাদের হয়রানি হতে হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতিতে এনালাইজারের মাধ্যমে দুধের ফ্যাট পরীক্ষা করার নিয়ম থাকলেও তারা তা না করে সাবেক পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রতি লিটার দুধে থাকা চার দশমিক সাত পয়েন্ট ফ্যাটের পরিবর্তে চার দশমিক শূন্য বা তার কাছাকাছি পয়েন্ট করে দিচ্ছেন। এভাবে দুধের মান খারাপ দেখিয়ে খামারিদের দাম কম দেওয়া হচ্ছে। এতে তারা প্রতিদিন মোটা অঙ্কে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা আরও জানান, ফ্যাট বেশি থাকার পরও দুধে কম ফ্যাট দেখানোর পর মাপের সমতা ফিরিয়ে আনতে ক্যানে পানি মেশাচ্ছেন ওই কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এতে যে পানি মিশ্রিত দুধ বেশি হয়, তা তাদেরই দালাল সমবায় মালিকদের দুধের হিসাবের বিলের মধ্যে লিখে দেওয়া হয়। পরে বাড়তি দুধের দাম হিসাব করে সামান্য অংশের টাকা ওই সব দালাল সমবায় কর্মকর্তাকে দিয়ে সিংহভাগই টাকা পকেটস্থ করছেন তিন কর্মকর্তা-কর্মচারী। কেউ এর প্রতিবাদ করলে সেসব সমবায় সমিতির মালিক বা তাদের কর্মচারীদের ‘দুধে ত্রুটি আছে’ উল্লেখ করে লাইন থেকে বের করে দিয়ে ফেলে রাখা হতো। এমনকি প্রতিবাদকারীকে জব্দ করতে ক্যানের মধ্যে কৌশলে রাসায়নিক পদার্থ (অ্যালকোহল) দিয়ে দুধ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে সিন্ডিকেট প্রতিদিন সুকৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তারা জানান, কখনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কেন্দ্র পরিদর্শন করতে এলে শুধু তাদের সামনেই আধুনিক পদ্ধতির এনালাইজার প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যে কারণে খোদ মিল্কভিটার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ধরতে পারচ্ছেন না দুর্নীতি ও চালাকি। অভিযোগে আরও বলা হয়, এই চক্রের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় নরসিংদীতে বদলি করা হয়েছে মিল্কভিটার কর্মচারী সাবদুল ইসলাম তোতাকে। একইভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি ধরে ফেলার কারণে হিসাবরক্ষক ইব্রাহিমকে ঝিকরগাছায়, সমিতি সংগঠক মাহবুবুর রহমানকে বাঘাবাড়ীতে বদলি করা হয়। এসব বদলিতে অনিয়মকারীরা যেমন শক্তিশালী হয়েছে, তেমনি জিম্মি হয়ে পড়েছেন নিরীহ সাধারণ দুগ্ধ সমবায়ীরা। এসব অভিযোগের ব্যাপারে মিল্কভিটা সাতক্ষীরার বিসিক শিল্পনগরী শাখা অফিসের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলামের সঙ্গে গতকাল কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি। তবে একপর্যায়ে তিনি জানান, ‘এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারাই বিষয়টি দেখছেন।’

সর্বশেষ খবর