মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

গড়াই নদীতে ড্রেজিংয়ের পরও নাব্যতা ফিরছে না

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

গড়াই নদীতে ড্রেজিংয়ের পরও নাব্যতা ফিরছে না

বন্ধ আছে খনন কাজ, হেঁটে গড়াই নদী পার হচ্ছে এলাকার মানুষ

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবনসহ দেশের উপকূলভাগে মিঠাপানির একমাত্র আধার গড়াই নদী। সারা বছর নদীর নাব্যতা ধরে রাখতে এর উত্সমুখ কুষ্টিয়া অঞ্চলে নদী খননে ৫৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হয়েছে। তারপরও শুষ্ক মৌসুমে বন্ধ হয়ে গেছে নদীর স্রোতধারা। গত নভেম্বরের পর উত্সমুখ থেকে নদীতে পানি প্রবাহ একেবারেই বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চলতি শুষ্ক মৌসুমে নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। উত্সমুখ থেকে জি কে বাঁধ এলাকা পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এ নদী পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। নেদারল্যান্ডসের জিআরসি কোম্পানির মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হলে এলাকাবাসীর মাঝে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষে দেখা যায়, ‘যথা পর্বং তথা পরং’। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গড়াই নদীর মুখে বিশাল বালুরাশি জমে। এতে গড়াই নদী একেবারে মরা খালে পরিণত হয়। এর বড় প্রভাব পড়তে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলের নদী এবং সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ওপর। পরে আওয়ামী লীগ সরকার আবার গড়াই নদীর পাানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা, এলাকার খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষা করা, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা, সুন্দরবন এলাকার লবণাক্ততা দূরীকরণ, দক্ষিণাঞ্চলের মিষ্টি পানির প্রবাহ বৃদ্ধি, সেচ সহযোগিতা প্রদান, মত্স্য চাষ সুবিধা, সুন্দরবনের বৃক্ষরাজির উত্পাদন বৃদ্ধি, কুষ্টিয়া-যশোর-ঝিনাইদহ-মাগুরা-ফরিদপুর-যশোর ও খুলনা এলাকাকে মরুকরণের হাত থেকে রক্ষায় উদ্যোগ নেয়।

সরকার ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে চার বছর মেয়াদি বৃহত্তর আকারে ড্রেজিং করতে ‘গড়াই নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প-২’ গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৪২ কোটি টাকা। পরে প্রকল্পের আওতায় নদীর উত্সমুখ থেকে কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়ন অফিস পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার মাটি খনন করা হয়। চায়না হারবার কোম্পানি তিন বছর ধরে খননকাজ চালায়। কাজের মেয়াদ শেষ হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড পরবর্তী বছরগুলোতে খননকাজ অব্যাহত রাখে। আর এ কাজের জন্য দুটি ড্রেজারও কেনা হয়। কিন্তু ফলাফল হয় শূন্য। নদী পাড়ের বাসিন্দা শাহজাহান ও সালাম জানান, ‘নদীতে পানি নেই এটাই বাস্তবতা। খননের পর যদি তিন মাস পানিই না থাকে- তাহলে খুঁড়ে লাভ কী? শুধু শুধু কোটি কোটি টাকার অপচয়। আমরা তো পানি পাচ্ছি না। ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও খনন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।’ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, ‘প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। অথচ নদীতে পানি থাকে না। যত টাকা নদীতে ঢালা হয়েছে তা বিফলে গেছে।’ তিনি জানান, খনন করে বালু নদী পাড়েই রাখা হচ্ছে। বৃষ্টিতে সেই বালু নদীতে পড়ে আগের রূপে ফিরে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর জন্য অপরিকল্পিত ড্রেজিং দায়ী। অপরিকল্পিত খনন, অব্যবস্থাপনা, লুটপাটসহ নানা কারণে বিপুল অর্থ জলে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর