বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাত জনকে আসামি করে মামলা, গ্রেফতার ২

শরীয়তপুরপ্রতিনিধি

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেরচর ইউনিয়নের একটি গ্রামে দুই কিশোর-কিশোরীকে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় জাজিরা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিশোরের বাবা সোমবার রাতে জাজিরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। মামলায় সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। আটক লিয়াকত মল্লিক ও বাদল ভুইয়াকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়েছে।  জাজিরা থানা সূত্র জানায়, কুণ্ডেরচর আবদুল মান্নান মল্লিককান্দি উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর সঙ্গে তার প্রতিবেশী এক কিশোরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি তারা দুজন বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামের শেষ প্রান্তে নদীর ঘাট থেকে তাদের আটক করে কয়েকজন যুবক। আটক করে তাদের আনা হয় কুণ্ডেরচর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত মল্লিকের বাড়িতে। লিয়াকত মল্লিকের নির্দেশে বাড়ির উঠানে তাদের শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে রাতভর নির্যাতন চালানো হয়। পরের দিন তাদের নেওয়া হয় কুণ্ডেরচর আবদুল মান্নান মল্লিককান্দি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। সেখানে তাদের দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়, তার পর তাদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। কুণ্ডেরচর ইউপির তিন নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কামাল মল্লিক, স্থানীয় আমির হোসেন মল্লিক ও সুজন মল্লিক কিশোর-কিশোরীকে জুতা দিয়ে পেটাতে থাকে। তাদের হাত বেঁধে বিদ্যালয়ের মাঠে ফেলে রেখে যায়। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য তাদের পরিবারকে হুমকি দেয় কামাল মল্লিক। এমনকি তাদের চিকিৎসার জন্য গ্রামের বাইরে না নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। তাদের নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউব ও ফেসবুকে দেওয়া হয়। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পর এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।

জাজিরা থানাপুলিশ সোমবার সন্ধ্যায় এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কুণ্ডেরচর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত মল্লিক ও ওই বিদ্যালয়ের দফতরি বাদল ভুইয়াকে আটক করে। গতকাল দুপুরে পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠিয়েছে।

নির্যাতিত কিশোরের বাবা স্বপন খান সোমবার রাতে জাজিরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় কুণ্ডেরচর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত মল্লিক, তিন নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কামাল মল্লিক, ইকবাল মল্লিক, আমির হোসেন মল্লিক, সুলতান মল্লিক, মনির মল্লিক ও বাদল ভুইয়াকে আসামি করা হয়েছে।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, সাত আসামির মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, কিশোর-কিশোরীকে অমানবিক নির্যাতনের সঙ্গে একজন বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধি সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। মামলার কপি পাওয়ার পর ওই ইউপি সদস্যকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর