রবিবার, ২০ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

মানিকগঞ্জের উন্নয়নে অন্তরায় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব

মহকুমা থেকে ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত হয় মানিকগঞ্জ। স্বাধীনতার পর থেকে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে তেমন উন্নয়ন হয়নি এ জেলায়। মহাসড়ক ও নদীবেষ্টিত মানিকগঞ্জ কৃষি, মত্স্য ও শিল্পাঞ্চল গড়ার উজ্জ্বল সম্ভবনা থাকলেও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে অর্জিত হয়নি আশানুরূপ সাফল্য। সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে পাড়লে জেলার চরাঞ্চলে গড়ে উঠতে পারে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্প-কারখানা, বনায়ন ও পর্যটন কেন্দ । মানিকগঞ্জের নানা সমস্যা ও সম্ভবনা নিয়ে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন জেলা প্রতিনিধি মো. কাবুল উদ্দিন খান—

 

 

 

উন্নয়নের জন্য চাই সমন্বিত উদ্যোগ

—গাজী কামরুল হুদা সেলিম

স্বাধীনতার ৪৫ বছরে বহুবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে। মানিকগঞ্জ থেকে অনেকেই হয়েছেন এমপি-মন্ত্রী। কখনোই সমন্বিত উদ্যোগ

গ্রহণ বা সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়নি। ফলে অপরিকল্পিত নগরায়ণ হয়েছে। প্রাপ্য সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন জেলাবাসী। মানিকগঞ্জকে সময়পযোগী করতে হলে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এমনটাই মনে করেন, নবনির্বাচিত মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা গাজী কামরুল হুদা সেলিম। তিনি বলেন— নীতিনির্ধারক ব্যক্তিবর্গ একসঙ্গে বসে সমস্যা নির্ধারণ করতে হবে। তারপর পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করতে হবে। ঢাকার কাছের জেলা হওয়া সত্যেও এখানে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়নি। একটি মহিলা কলেজ ছাড়া মানিকগঞ্জে গড়ে উঠেনি আর কোনো মহিলা কলেজ। এ কারণে উচ্চ শিক্ষায় নারীরা পিছিয়ে রয়েছে। দেশের প্রধান সড়কগুলোর অন্যতম ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। এখানে রেলপথ হওয়া উচিত ছিল অনেকই আগেই। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আরিচাঘাট এলাকায় বিদ্যুৎ পাওয়ার প্লান্ট এবং শিল্পাঞ্চল আজও গড়ে উঠেনি। এখন সময় এসেছে উন্নয়ন করার। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নমূলক কাজে হাত দিতে হবে।

 

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে

—এসএ জিন্নাহ কবীর

বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ এসএ জিন্নাহ কবীর বলেছেন— সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় মনিকগঞ্জের

উন্নয়নের রূপরেখা। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ঠিক থাকলে কাজের সুফল দেখা যাবে। সরকার পরিবর্তন হলেও কাজের পরিবর্তন হওয়া যাবে না। শুরু হওয়া কাজটি সমাপ্ত করতে পারলেই উন্নয়ন দৃশ্যমান হবে। উপকৃত হবে দেশ ও জনগণ। কৃষিনির্ভর মানিকগঞ্জের কৃষকদের নিয়ে আগে ভাবতে হবে মত দেন এ রাজনীতিক। জিন্নাহ কবীর বলেন— যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় এ জেলায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য শহরে সময় মতো পৌঁছাতে পারে না। ফলে কৃষক ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট উন্নয়ন, পর্যাপ্ত হিমাগারের ব্যবস্থা হলেই সাফল্যের শিখরে পৌঁছাবেন কৃষকরা। মানিকগঞ্জের কাঁচা মরিচ ও গাজর জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সরবরাহ হয়ে থাকে। গাজর সংরক্ষণের জন্য সিংগাইরে একটি হিমাগার প্রতিষ্ঠা হলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং কৃষিপণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা হলে কৃষকরাই হবেন এলাকার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তিনি জানান, শিল্পায়নের নামে অপরিকল্পিতভাবে ঊর্বর ভূমি দখল হচ্ছে। যে করেই হোক কৃষিজমি রক্ষা করতে হবে।

 

রেললাইন হলে পাল্টে যাবে জেলার চিত্র

—তাবারাকুল তোসাদ্দেক

কর্মসংস্থান থাকলেই সেখানে লোকজনের সমাগম ঘটে। দ্রুত বদলে যেতে থাকে সেখানকার চিত্র। যত তাড়াতাড়ি কল-কারখানা প্রতিষ্ঠা করা যাবে উন্নয়ন

তত তারান্বিত হবে। মানিকগঞ্জের উন্নয়নের স্বার্থে সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছানো উচিত। এসব কথা জানান, মানিকগঞ্জের সন্তান এফবিসিসিআইর পরিচালক তাবারাকুল তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটু।

এই ব্যবসায়িক নেতা বলেন— ইতিমধ্যে বিশেষ অর্থনীতি অঞ্চল হিসাবে মানিকগঞ্জ তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর কার্যক্রম শুরু হলেই ঘুরে যাবে জেলার উন্নয়নের চাকা। কয়েক বছরের মধ্যে ভিন্ন রূপ দেখতে পাবেন মানিকগঞ্জবাসী। তিনি জানান, মানিকগঞ্জে এখনো গড়ে উঠেনি পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল। যার অন্যতম কারণ তীব্র গ্যাস সংকট। বিদ্যুৎ অবস্থা কিছুটা সহনীয় হলেও যোগাযোগ ক্ষেত্রে রয়েছে বৈষম্য। মানিকগঞ্জে উৎপাদিত পণ্য ঢাকাসহ অন্যত্র সরবরাহের একমাত্র মাধ্যম সড়ক পথ। নদী পথ ও রেল যোগাযোগ থাকলে অনেক কম খরচে পণ্য সরবরাহ করা যেত। ফলে ব্যাপক হারে গড়ে উঠতো শিল্পপ্রতিষ্ঠান। কর্মসংস্থান হতো হাজার হাজার লোকের। অতিসত্বর ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে রেললাইন স্থাপন ও নদীগুলো খনন করা প্রয়োজন। তাই মানিকগঞ্জ জেলার দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

 

সংস্কৃতি অঙ্গন সমৃদ্ধ হলে মাদকমুক্ত হবে জেলা

—সুদেব কুমার সাহা

যেসব ছেলে-মেয়ে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন তারা সমাজের অপরাধ মূলককাজে জড়িয়ে পড়ে। সন্তানদের

পড়ালেখার সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলায় সম্পৃক্ত রাখতে পাড়লে তারা নেশার জগতে প্রবেশের সুযোগ পাবে না। তাই প্রত্যেককে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে জড়িত থাকতে হবে। এই কথাগুলো বলেন— মানিকগঞ্জ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি সুদেব কুমার সাহা। তিনি বলেন— এক সময় মানিকগঞ্জে গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র সারা বছর ফুটবল, ভলিবল, হা-ডু-ডু, দাড়িয়াবাঁধাসহ কোনো না কোনো খেলার প্রতিযোগিতা হতো। এসব প্রতিযোগিতার দর্শক ছিল শিশু থেকে বৃদ্ধরা। অলস সময় না থাকায় তখন মাদক তাদের স্পর্শ করতে পাড়েনি। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে প্রতিটি গ্রামে খেলার উপযোগী মাঠ করতে হবে। মানিকগঞ্জের শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়াম ও বিজয় মেলা মাঠ সারা বছর খেলাধুলার জন্য উম্মুক্ত রাখা দরকার। এখান থেকেই সৃষ্টি হবে নতুন খেলোয়াড়। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত মানিকগঞ্জ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম দীর্ঘ দিনেও বাস্তবায়িত না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে দ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর