রবিবার, ২৬ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ধামরাইয়ে ভুয়া লোনের জালে কৃষক

ধামরাই প্রতিনিধি

ধামরাইয়ের কালামপুর সোনালী ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এক শ্রেণির দালালরা বিভিন্ন গ্রামের নিরীহ কৃষকদের নামে ব্যাংক থেকে কৃষি লোন গ্রহণ করছেন। এখন এই লোনের টাকা আদায়ের জন্য ব্যাংক থেকে দেওয়া হচ্ছে ওইসব কৃষকদের নামে চূড়ান্ত নোটিস। আর এ নোটিস পেয়ে কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। তারা ব্যাংক থেকে কোনো টাকা গ্রহণ করেননি বলে ফাইলের সঙ্গে নিজেদের সই স্বাক্ষর আর ছবি মেলাতে ভিড় জমাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে। এতে নোটিস পাওয়া অনেক কৃষকদের ছবি ও স্বাক্ষর মিলছে না। তারা এভাবে ভুয়া লোনের জালে জড়িয়ে যাচ্ছেন। জানা গেছে, ধামরাইয়ের কালামপুর সোনালী ব্যাংকে বর্তমানে ৮ কোটি ৫ লাখ টাকা কৃষি লোনের খেলাপি রয়েছে। আর এদের মধ্যে অধিকাংশ লোনই রয়েছে ভুয়া কৃষকদের নামে। এখন ব্যাংক কর্মকর্তারা জুন মাসকে সামনে রেখে টার্গেট নিয়েছে ওই লোনের টাকা উত্তোলনের। তাই দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের চূড়ান্ত নোটিস। আর কৃষকরা লোনের নোটিস পেয়ে হতাশ ও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, কালামপুর সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতায় এক শ্রেণির দালালরা বিভিন্ন কৃষকদের জমির দলিল ও পর্চা সংগ্রহ করে বিভিন্ন এলাকার লোকের ছবি ও ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে তুলে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ লোনের মোটা একটি অংশ হাতিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আর কিছু পাচ্ছেন দালারা। আর বিপদে পড়ছেন স্থানীয় কৃষকরা। এমনি ভুক্তভোগীর শিকার ধামরাইয়ের চানখালী গ্রামের আইন উদ্দিনের ছেলে কৃষক সাইজুদ্দিন। তিনি জানান, জমি রেজিস্ট্রার করে তো আর সঙ্গে সঙ্গে মূল দলিল দেন না দলিল লেখকরা। কৌশলে দালালরা তার দলিল হাতিয়ে নিয়ে অন্য কারও ছবি ও স্বাক্ষর দিয়ে তার নামে গত ২০০৩ সালের ৪ অক্টোবর কালামপুর সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে ২৫ হাজার টাকা লোন উত্তোলন করা হয়েছে। যার লোন হিসাব নং ৬৭৩০০১১৪। এই লোনের টাকা আদায়ের জন্য গত ১৩ জুন তার বাড়িতে একটি চূড়ান্ত নোটিস পাঠানো হয়েছে। নোটিস পেয়ে ওই কৃষক গুরুতর অসুস্থ ও কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিছুটা সুস্থ হয়ে গতকাল কালামপুর সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার মো. মিজানুর রহমানের কাছে ফাইল বের করে তার সই স্বাক্ষর ও ছবি মিলিয়ে দেখতে চান। পরে ম্যানেজার ফাইল বের করে দেখেন ছবি ও সই স্বাক্ষরের সঙ্গে নোটিস দেওয়া কৃষক সাইজুদ্দিনের কোনো মিল নেই। তখন ম্যানেজার দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। এভাবেই ধামরাইয়ের হাজারো কৃষক ভুয়া লোনের জালে জর্জরিত। তারা কিছুই জানেন না অথচ ব্যাংক থেকে দেওয়া হচ্ছে তাদের নামে খেলাপি লোনের টাকা পরিশোধের নোটিস। অন্যথায় দেওয়া হবে মামলা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকের এক কর্মচারী জানান, এখনো ব্যাংকে ওইসব দালালরা অনবরতই যাতায়াত করছেন এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক রাখছেন। এদের ব্যাংকে আসা বন্ধ না করলে কখনোই কালামপুর সোনালী ব্যাংক আর সুনাম অর্জন করতে পারবে না। এ ব্যাপারে ধামরাইয়ের কালামপুর সোনালী ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ ঘটনার সঙ্গে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং বিষয়টি তিনি তার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে জানান।

সর্বশেষ খবর