মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

শিক্ষা প্রকৌশলের ৩৬ কোটি টাকার কাজ সিন্ডিকেটের ভাগাভাগি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার ৩০টি কলেজের ৩৬ কোটি টাকার নির্মাণকাজের টেন্ডারে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ টেন্ডারে নিম্ন দরদাতাকে কাজ না দেওয়ায় সরকারের প্রায় ৪ কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। একটি সিন্ডিকেট ওই কাজগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়ায় সাধারণ ঠিকাদারদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা টেন্ডার বাতিল ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমানের অপসারণ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কুড়িগ্রামে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরটি অনেক আগেই সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে। এ অধিদফতরের সব টেন্ডার গোপন করে সিন্ডিকেটের লোকজন কাজ ভাগাভাগি করে নেন। অভিযোগ উঠেছে, এই সিন্ডিকেটকে সহায়তা করছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান। তিনি টানা ছয় বছর কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে নির্বাহী প্রকৌশলীর পদে রয়েছেন। বঞ্চিত ঠিকাদাররা জানান, মিজানুর রহমান দু-তিন বার বদলির আদেশ পেলেও তা জাদুবলে রুখে দিয়েছেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ইতিপূর্বে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার স্কুল ও কলেজের ভবন নির্মাণ এবং দ্বিতীয় তলা ঊর্ধ্বমুখীকরণের নির্মাণকাজে নিম্নমানের রড, সিমেন্ট, বালু ও ইট ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়াও নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের ফলে নির্মাণাধীন ওই ভবনগুলো এখন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের ৩০টি কলেজের ৩৬ কোটি টাকার টেন্ডার ভাগাভাগি করা নেওয়ার ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য জেলায় এলটিএম পদ্ধতি অনুসরণ করে ৫ ভাগ কম দরে টেন্ডার করার নিয়ম থাকলেও এখানে করা হচ্ছে ওটিএম পদ্ধতিতে। সেই সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে নিত্যনতুন শর্ত। এসবের মাধ্যমে টেন্ডার সিন্ডিকেট এখন কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে জগদ্দল পাথর হয়ে বসেছে। এ টেন্ডার সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার জন্য সাধারণ ঠিকাদাররা ফুঁসে উঠছেন। এলাকায় বলাবলি হচ্ছে, বেগতিক দেখে নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান এখন সিন্ডিকেটের পেশিমানবদের বেষ্টনীর মধ্যে থাকছেন। এদিকে ওটিএম পদ্ধতিতে টেন্ডার করায় সরকার প্রায় ৪ কোটি টাকা বেশি ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, নির্বাহী প্রকৌশলী বিশেষ রফা করে রাজশাহীর জামায়াত-বিএনপি ঘরানার ঠিকাদার ফরিদ উদ্দিনসহ স্থানীয় তিন-চার জন ঠিকাদারের নামে সব কাজ দিচ্ছেন। এ ছাড়াও ঠিকাদার ফরিদ উদ্দিন ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমানের বাড়ি একই এলাকায় হওয়ার সুবাদে দুজনই শেয়ারে ঠিকাদারি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ায় ঠিকাদার মহলে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। এ নিয়ে যে কোনো মুহূর্তে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে তীব্র আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘কারও কিছু করার থাকলে তারা করে দেখান। আমি আমার মতোই চলব। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোনো লাভ হবে না।’

সর্বশেষ খবর