শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

শাহজাদপুরে ফের অ্যানথ্রাক্স গরুর মাংস খাওয়ায় ভীতি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ফের ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স বা তড়কা রোগ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার চরকৈজুরী ও গোপালপুর গ্রামের ২৪ নারী-পুরুষ-শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত একটি গরু ও ছাগলের মাংস কাটা, রান্নাবান্না ও খাওয়ার পর এদের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ দেখা দেয়।

জেলায় বার বার অ্যানথ্রাক্স দেখা দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে মাংস খাওয়া নিয়ে এক প্রকার ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মতে, প্রাণিসম্পদ ও স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসীনতার কারণে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, এর জন্য মূলত জনসচেতনতার অভাবই দায়ী। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, সঠিক সময়ে গবাদিপশুকে ভ্যাকসিন না দেওয়া অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণ। জানা যায়, গত ৮ আগস্ট চরকৈজুরী গ্রামে একটি অসুস্থ গরু জবাই করে কমদামে চরকৈজুরী ও গোপালপুর গ্রামের ৫০টি পরিবার ভাগাভাগি করে নেয়। এই মাংস কাটা ও নাড়া-চাড়ার সঙ্গে জড়িতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালো ক্ষত ও ঘায়ের মতো দেখা দেয়। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ওষুধ খেয়ে ভালো না হওয়ায় তিনজন যান সদর হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসক এটিকে অ্যানথ্রাক্স বলে শনাক্ত করেন। এ ছাড়া একই গ্রামে একটি অসুস্থ ছাগল জবাই করে এ মাংস নেয় ১০টি পরিবার। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টিম ছুটে যায় ওই গ্রামে। তারা এ দুটি পশুর মাংস কাটা ও রান্নার কাজে জড়িত ২৪ অ্যানথ্রাক্স রোগী শনাক্ত করেন। চলতি বছর তিন দফায় এ উপজেলায় গবাদি পশুর রোগ মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, যখন অ্যানথ্রাক্স দেখা দেয় তখনই শুধু স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন মাঠে দেখা যায়। কোনো পোস্টার বা মাইকিং করা হয়নি। যদিও নামমাত্র মাইকিং করা হয়, তা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছায় না। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, গবাদি পশুর জন্য বিখ্যাত শাহজাদপুর উপজেলায় সাড়ে ছয় লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের ছোট্ট একটি অফিসের জনাকয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে জনসচেনতা সম্ভব নয়। শাহজাদপুর স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাফরুল হোসেন জানান, এ জেলার মাটিতেই অ্যানথ্রাক্সে জীবাণু ছড়িয়ে রয়েছে। এ জন্য সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে রোগ নির্মূল করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, রোগাক্রান্ত গরুর মাংস খাওয়া যাবে না। কোনো গরু মারা গেলে মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে শাহজাদপুরের কায়েমপুর গ্রামে প্রথম এই রোগ দেখা দেয়। ওই সময় প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। এরপর প্রতিবছরই শাহজাদপুর ছাড়াও উল্লাপাড়া, বেলকুচি ও কামারখন্দে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

সর্বশেষ খবর