শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

‘মোক আর কষ্ট করির নাগবে না’

আবদুল বারী, নীলফামারী

‘মোক আর কষ্ট করির নাগবে না’

সরকার থেকে পাওয়া ঘরে বসবাসকারী এক পরিবার

এক সময় যাদের পেশাই ছিল ভিক্ষা করা তাদের এখন আর কারও কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করতে হয় না। তারা এখন স্বাবলম্বী। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে ৯৮৯ জনকে করা হয়েছে কর্মমুখী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২৪২ জনকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করা হয়। তালিকাভুক্ত ৯৮৯ জনকে পুনর্বাসনের আওতায় এনে দেওয়া হয় বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মমুখী করে গড়ে তোলা হয়। ৯৫১ জনকে একটি বাড়ি একটি খামারের সদস্য করে দেওয়া হয় ঋণ। এই টাকা দিয়ে গরু, ছাগল ও ব্যবসা করে আজ তারা স্বাবলম্বীর পথে। তাদের অ্যাকাউন্টে বর্তমানে নিজস্ব সঞ্চয় ৪৬ লাখ ৬৪ হাজার ৮০০ টাকা, কল্যাণ অনুদান ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ৮০০, আবর্তক তহবিল ৪৫ লাখ ৩১ হাজার ৬২৩ টাকাসহ মোট তহবিল রয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ২২৩ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম পর্যায়ে ১০ জন পুনর্বাসিতের ঘর নির্মাণের জন্য ৬০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ দফায় আরও ২৩২ জনের ঘর নির্মাণের জন্য ঘরপ্রতি ৭৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর পেয়ে পুনর্বাসিতরা খুবই খুশি। বাহাগিলী ইউনিয়নের আলেমা বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টির দিনোত কী যে কষ্ট করি আছনু। ঘর পাওয়ায় আর কষ্ট করির নাগবে না।’ চাঁদখানা ইউনিয়নের আলিজোন বেওয়া বলেন, ‘সরকার থাকি ঘর পাওয়ায় মোক আর কষ্ট করির নাগবে না।’ গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের বাচ্চানী বেওয়া বলেন, চটের বস্তা দিয়ে চালা বানেয়া কী কষ্ট করে আছনু। ঝড়-বৃষ্টি আর শীতোত ভিজি আছনু। আর মোক ঝড়-বৃষ্টি ও শীত নিয়ে চিন্তা করিবার নাগিবে না। সরকার মোক একটা ঘর দিয়া কী যে উপকার করছে।’ তাদের মতো ২৪২ জন পুনর্বাসিত ভিক্ষুক ঘর পাওয়ায় তাদের দুঃখ-দুর্দশার দিন শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ এর ‘যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ’ প্রকল্প হতে এসব পুনর্বাসিতের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন জানায়।

উপজেলা প্রকৌশলী এসএম কেরামত আলী নান্নু জানান, পুনর্বাসিত ভিক্ষুকদের ঘর নির্মাণ কাজ প্রেরিত প্লান, ডিজাইন ও প্রাক্কলন মোতাবেক যাতে হয় এ জন্য একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে নিয়োজিত করা ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মেহেদী হাসান জানান, উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে ঘর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হয়েছে। সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বর্তমানে নড়াইল জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ভিক্ষুক পুনর্বাসনে কিশোরগঞ্জ একটি রোল মডেল। কিশোরগঞ্জ উপজেলার অভিজ্ঞতার আদলে নড়াইল জেলাকেও ভিক্ষুকমুক্ত করার কাজ চলছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর