রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দেড় মাসে আটজনের মৃত্যু এলাকা ছাড়ছে নারী-শিশু

শেরপুর সীমান্তজুড়ে হাতির তাণ্ডব

শেরপুর প্রতিনিধি

ভারত সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদি উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় হাতি ও মানুষের যুদ্ধ বহু পুরনো। সম্প্রতি এ যুদ্ধ যেন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। বন্যহাতির আক্রমণে তিন উপজেলায় গত পাঁচ দিনে মারা গেছেন পাঁচজন। আর গত ৪৩ দিনে নিহতের সংখ্যা আট। এ সময় আহত হয়েছেন প্রায় ৫০ জন। সর্বশেষ গতকাল ভোরে জিতেন্দ্র মারাক নামে একজন ও শুক্রবার দিবাগত রাতে মমেনা নামে এক গৃহবধূকে আছড়িয়ে মেরে ফেলে বন্যহাতির দল। জানা যায়, কিছুদিন আগে হাতি প্রতিরোধে তৈরি বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকে মারা গেছে একটি হাতি। ওই হাতিটি মারা যাওয়ার পর হাতির দল আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে বলে কারও কারও ধারণা। ঝিনাইগাতি উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, কয়েক দিন আগে ভারত এ দিকের করিডোরটি বন্ধ করে দেয়। ফলে ভারতের পাহাড় থেকে আসা বন্যহাতির দলটি ফিরে যেতে না পারায় সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। হাতির তাণ্ডবে ঘরবাড়ি ভাঙচুরসহ শত শত একর জমির ধান ও গাছপালার ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন হাতির আক্রমণ ঠেকাতে এবং এলাকাবাসীর জানমাল রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিলেও তা কোনো কাজে আসছে না। প্রায় প্রতিদিনই হাতি আসছে, ধ্বংস করছে ঘরবাড়ি, ফসল, গাছপালা। মেরে ফেলছে নিরীহ মানুষ। সম্প্রতি ঝিনাইগাতি সীমান্তে হাতির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় প্রাণ রক্ষায় নারী, শিশু, বৃদ্ধরা এলাকা ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছেন অন্যত্র। জানমাল রক্ষায় কোনো কোনো বাড়ি জেনারেটরের বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে সীমান্তবর্তী ৩০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ হাতির ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। নিহতদের স্বজনের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে এলাকা। হাতি তাড়াতে স্থানীয় এমপি ফজলুল হক গতকাল পুলিশকে ফাঁকা গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে সীমান্তের লোকজন ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত মশাল জ্বালিয়ে পাহারা দিচ্ছেন বাঙালি ও আদিবাসী কৃষকরা। এর মধ্যেও হাতি দলবেঁধে এসে মানুষের জানমালের ক্ষতি করছে। ক্ষতিগ্রস্ত সীমান্ত এলাকার শতাধিক পরিবার ভিটেমাটি আবাদি জমি ফেলে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, বিগত ২০ বছরে শেরপুরের বিভিন্ন সীমান্তে হাতির আক্রমণে দুই শতাধিক ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটেছে। পঙ্গু ও আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। এ ছাড়া হাতির আক্রমণে এক যুগে নষ্ট হয়েছে ঘরবাড়ি, ফসল, ফলের বাগান, গোলার ধানসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ। নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম মোখলেছুর রহমান রিপন হাতির আক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচাতে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দ্রুত করিডোর খুলে দিতে মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার ডিসির সঙ্গে আলাপ হবে বলে জানান শেরপুর জেলা প্রশাসক। স্থানীয় এমপি এম ফজলুল হক বলেছেন— হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষায় শিগগিরই সোলার ফেনসিং নামক একটি পাইলট প্রকল্প চালু ও ভারতের সঙ্গে পতাকা বৈঠক করা হবে।

সর্বশেষ খবর