সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দলীয় কোন্দল রূপ নিয়েছে সংঘাতে

তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগ

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

দলীয় কোন্দল রূপ নিয়েছে সংঘাতে

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। যার শুরু ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য গাজী ইসহাক হোসেন তালুকদারের মৃত্যুর পর মনোনয়ন টিকিট নিয়ে। এরপর দ্বন্দ্বের সঙ্গে যুক্ত হয় কয়েক নেতার ব্যক্তিস্বার্থ। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব খোলস ছাড়িয়ে রূপ নিয়েছে সংঘাতে। কোন্দলের জেরে সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হককে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় এমপি মুক্তিযোদ্ধা গাজী ম.ম. আমজাদ হোসেন মিলন ও তার স্বজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। হামলা-মামলাকে ন্যক্কারজনক বলে মন্তব্য করছেন নেতা-কর্মীরা। দ্রুত এর সমাধান না হলে কোন্দল চরম পর্যায়ে পৌঁছার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন দলটির শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক আব্দুর রশিদ জানান, একজন উপজেলা চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে আহত করা যেমন ন্যক্কারজনক তেমনি একজন এমপিকে জড়িয়ে মামলা করাও ন্যক্কারজনক। তাড়াশে ব্যক্তিস্বার্থ থেকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু। এর দ্রুত সমাধান দরকার। উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হক তার ওপর হামলার জন্য এমপিকে দায়ী করে বলেন, ‘এমপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নেই। আমার কাছে উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে হেরে তিনি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছেন। ম.ম আমজাদ হোসেন মিলন এমপি হামলার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি সেখান থেকে বাড়িতে আসার পর হামলা হয়েছে। এর সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের যখনই বিপদ হয়েছে আমি পাশে থেকেছি।’ জানা যায়, ২০১৪ সালে তৎকালীন এমপি গাজী ইসহাক হোসেনের মৃত্যুর পর ম.ম আমজাদ হোসেন মিলন দলীয় মনোনয়ন প্রার্থী হন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হক মনোনয়নপ্রত্যাশী না হলেও প্রয়াত এমপি ইসহাক হোসেনের ছেলে ইমন তালুকদারের পক্ষ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করেন। শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতা গাজী আমজাদ হোসেনকে মনোনয়ন দেন। মনোয়ন দৌড়ে হেরে যাওয়ার পর থেকেই আমজাদ হোসেন মিলনের সঙ্গে আব্দুল হকের দ্বন্দ্ব শুরু। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় ব্যক্তি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়। এরপর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন নিয়ে দেখা দেয় আরেক দ্বন্দ্ব। অভিযোগ রয়েছে, এমপি ও এমপির পক্ষের নেতাদের মতামতকে উপেক্ষা করে উপজেলা চেয়ারম্যান তার পছন্দের ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেন। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা পরিষদের শত কোটি টাকার পুকুর দখলের পাঁয়তারা ও উপজেলার খাস পুকুরগুলো নিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। উলিপুর দিঘির দখল নিয়ে খুন হন আফজাল নামে এক ব্যক্তি। শৈলাপাড়ায় হত্যার শিকার হন মজনু নামে আরেকজন। আব্দুল হকের নিজ গ্রামেও একটি হত্যাকাণ্ড ঘটে। এসব ঘটনা রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে গাজী আমজাদ হোসেন মিলন এমপি হওয়ার পর স্বজনসহ কয়েক সুবিধাভোগী নেতা-কর্মীকে প্রাধান্য দেন বলে কানাঘুষা শুরু হয়। কয়েক নেতার অভিযোগ, এমপি হওয়ার পর থেকে তার ঘনিষ্ঠরা উপজেলার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। এসব নিয়ে ঘোলাটে পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দুই পক্ষের সমর্থকরা একে অন্যকে দোষারোপ করায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।

সর্বশেষ খবর