জমি নিয়ে বিরোধের জেরে খাদুলী গ্রামের ‘সৈয়দ বাহিনী’র দৌরাত্ম্যে ৪৫টি পরিবার নয় মাস ঘরছাড়া অবস্থায় এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ পরিবারগুলোয় রয়েছে ১৭টি নাবালক শিশু ও ৫২ ছাত্রছাত্রী। নিজের বাড়িতে আসতে পারছে না তাই তাদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারগুলো তাদের পৈতৃকসূত্রে পাওয়া ২ শতাধিক বিঘা জমিতে চাষাবাদ করতে পারছে না। বর্গা চাষ করাতে গেলেও সৈয়দ বাহিনী বাধা দিচ্ছে। প্রতিকারের জন্য ভুক্তভোগী পরিবারগুলো সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে যে স্মারকলিপি (প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়ার জন্য) দেয় তাতে এসব তথ্য রয়েছে। উল্লাপাড়া উপজেলার বড়পাঙ্গাসি ইউনিয়নের গ্রাম খাদুলী। গ্রামটি চলনবিলের প্রত্যন্ত এলাকায়। জানা গেছে, এই গ্রামের সাইফুল ইসলাম ১৯৭১ সালে রাজাকার ছিলেন। তিনি ২০১২ সালে মারা যান। সাইফুল এই গ্রামের প্রায় ৫৪ একর সরকারি জমি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে দখল করেন। অথচ এই সম্পত্তি আগেই ইজারা দেওয়া ছিল। ফলত ইজারাদারদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব বাধে। এ অবস্থায় ওই জমি থেকে তিনি ১ হাজার ১৮০ শতক জমি বিক্রি করে দেন। এতে সরকার পক্ষ তার বিরুদ্ধে মামলাও করে। পরবর্তীতে গ্রাম্য শালিসে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর সাইফুল পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে যায়। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৬ সালে রাজাকার সাইফুলের ছেলেরা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন এবং এলাকার দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে হাত করে চোটপাট শুরু করেন। সাইফুলের ছেলে সৈয়দ আলী, শহিদুল ইসলাম, জালাল উদ্দিন ও নবীর উদ্দিন এবং এদের চাচা আবু সিদ্দিক ওরফে হুকুম আলী নানাভাবে ওই ৪৫টি পরিবারের ওপর অত্যাচার চালাতে থাকে। ভুক্তভোগীরা এদের ‘সৈয়দ বাহিনী’ নামে অবহিত করে। এলাকার নান্নু, জাহাঙ্গীরসহ ৪৫ পরিবার ‘সৈয়দ বাহিনী’র রোষানলে পড়ে। একপর্যায়ে ‘সৈয়দ বাহিনী’ এসব পরিবারের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর-ভাঙচুর ও পুকুরের মাছ মেরে প্রায় ২৫ লাখ টাকা লুটে নেয়। হত্যার হুমকি দিয়ে এসব পরিবারকে ঘরছাড়া করে। নান্নু ও জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘নয় মাস ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। শিশু সন্তানদের নিয়ে সিরাজগঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়ার বিভিন্ন স্থানে বাস করছি। আমাদের দুর্দশার শেষ নেই। এমপি-এএসপি-ডিসিসহ বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিচ্ছি। কোনো কাজ হচ্ছে না।’ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, ‘ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চেয়ে আমার কাছেও আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’