শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বন্দোবস্তের জমি ২৮ বছরেও পাননি ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধারা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

তেঁতুলিয়া উপজেলার ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বরাদ্দ বেশির ভাগ জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছেন। স্থায়ী বন্দোবস্তের ২৮ বছরেও জমি বুঝে পাননি অনেকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু মুক্তিযোদ্ধাকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হলেও প্রভাবশালীরা দখল না ছাড়ায় তারা হতাশ। বরাদ্দের কাগজই তাদের সম্বল। এই কাগজ নিয়ে তারা ছুটছেন অফিসে-আদালতে। ভূমিহীন এ মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৮৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এ উপজেলার প্রায় ১৫ ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধার নামে সরকার খাস খতিয়ান-১-এর অন্তর্ভুক্ত ১০ একর ২৩ শতক জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়। বন্দোবস্তের ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো মুক্তিযোদ্ধা এখনো জমি দখলে নিতে পারেননি। পুলিশ প্রশাসন কয়েকজনকে জমি বুঝিয়ে দিলেও আবার দখল করে নেয় প্রভাবশালীরা। মুক্তিযোদ্ধা তমিজউদ্দিন জানান, গত বছর গুয়াবাড়ি এলাকার কয়েক মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়। দখলকারীরা পুলিশ, তহশিলদারকে অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে। জমির স্বত্ব বুঝে পেতে ২০১৫ সালে পঞ্চগড় জজ আদালতে মামলা করেন চার মুক্তিযোদ্ধা। নিজেদের পক্ষে রায়ও পান। বাদী খালপাড়ার জালালউদ্দিন ও মোহাম্মদ আলী জানান, ২৮ বছর আগে সরকার আমাদের নামে ৬৬ শতক জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়। এ জন্য জমির খাজনা পরিশোধ ও খারিজ করেছি। কিন্তু দখলে যেতে পারছি না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘কাগজপত্র নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি, কোর্ট থেকে রায়ও পেয়েছি। জমি বুঝে পাচ্ছি না। মুক্তিযোদ্ধা জয়নউদ্দিন বলেন, ‘পাঁচ শতক জমির উপর ভিটেবাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই আমার। ছেলেমেয়ে নিয়ে কোনো রকম মাথা গুঁজে আছি। সরকার আমার নামে ৩০ শতক জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দিয়েছে। কাগজ পেয়েছি কিন্তু জমি পাচ্ছি না। মুক্তিযোদ্ধা হয়ে আমি তো আর লাঠি হাতে নিতে পারি না।’ দর্জিপাড়ার বেলাল হোসেন জানান, ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সরকার ২০০৩ সালে আমার নামে এক একর খাস খতিয়ানের জমি বন্দোবস্ত দেয়। সেই জমি দখল করে আছেন সাহেব আলী এবং তছিরউদ্দিন। তারা আমার স্থায়ী বন্দোবস্ত বাতিল করে তাদের নামে পত্তন করে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। তেঁতুলিয়া থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভূমিহীন এসব মুক্তিযোদ্ধার নামে বরাদ্দের জমি কিছু টাউট বাটপাড় দখল করে রেখেছে। এ জমি পেতে প্রশাসনিক উদ্যোগ জরুরি।’ জেলা প্রশাসক অমলকৃষ্ণ মণ্ডল জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর