শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পুলিশের যোগসাজশে বরিশালে ডাকাতি!

হারতা পুলিশ ক্যাম্পের সব সদস্য প্রত্যাহার, ইনচার্জ বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালের উজিরপুরে হারতা বাজারে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডাকাতি প্রতিরোধে স্থানীয় ক্যাম্প পুলিশের গাফিলতির প্রমাণ মিলেছে! গ্রামবাসীর দাবি, ডাকাতির সঙ্গে পুলিশের অসাধু সদস্যদের যোগসাজশ ছিল। দুর্বৃত্তরা ডাকাতির পর ‘পুলিশকে ইশারা’ দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই রাতেই হারতা পুলিশ ক্যাম্পের সব সদস্য প্রত্যাহার ও ইনচার্জকে বরখাস্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, উজিরপুরের শতাব্দীপ্রাচীন হারতা মাছ বাজারে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একদল ডাকাত স্পিডবোটে এসে যেভাবে ডাকাতি করেছে তা সিনেমাকেও হার মানিয়েছে। ডাকাতরা ১৬টি মাছের আড়ত থেকে প্রায় কোটি টাকা লুট করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। এর আগে তারা গুলি ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তারা বাজারের লোকজনকে এলোপাতাড়ি মারধরের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। গুলি-বোমার শব্দে, আতঙ্কে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সোহরাব হোসেন রাতেই মারা যান। স্থানীয়দের দাবি, মাত্র ৩০ গজ দূরে অবস্থান করেও পুলিশ ডাকাতি প্রতিরোধে কোনো ভূমিকা রাখেনি। বরং ডাকাতি শেষে ডাকাতরা পুলিশকে ইশারা দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন হারতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হরেন রায়। ডাকাতির পর স্থানীয়দের তোপের মুখে রাতেই হারতা পুলিশ ক্যাম্পের ১৮ সদস্যকে পুলিশ লাইনসে ক্লোজ করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই মোজফ্ফরকে। রাতেই তাদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে রিজার্ভ ফোর্সের নতুন ১৮ সদস্যকে। হারতা ক্যাম্পের নতুন ইনচার্জ এসআই দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ওই ঘটনার পর বাজারের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, ‘ডাকাতি প্রতিরোধে হারতা ক্যাম্প পুলিশের ব্যর্থতার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। ব্যাপক তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় পুলিশের কারোর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না।’ এদিকে ডাকাতির ঘটনায় হারতা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সোহরাব বেপারীর ছেলে দুলাল বেপারী বাদী হয়ে গতকাল অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তবে এ ঘটনায় দুপুর পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হারতা বাজারে ডাকাতির পর পালিয়ে যাওয়ার পথে বাবুগঞ্জের আগরপুর নদে সন্দেহভাজন একটি স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি চালায় পুলিশ। তবে স্পিডবোটটি দ্রুত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়েছে কিনা, নিশ্চিত করতে পারেননি উজিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইকবাল হোসেন। হিজলা থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হারতা বাজারে ডাকাতির পর ওয়্যারলেস বার্তায় আশপাশের সব থানা পুলিশকে সতর্ক করা হয়। হিজলা থানা পুলিশও সতর্ক ছিল। রাত ১০টার দিকে হিজলাসংলগ্ন নদী দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে চলে যায় দুটি স্পিডবোট। এ সময় হিজলা পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে ১ রাউন্ড গুলি করলেও গতি রোধ করতে পারেনি। উজিরপুরের শিকারপুর বাজারের একটি সূত্র হারতা বাজারে ডাকাতির পর সন্ধ্যা নদী হয়ে দুটি স্পিডবোট দ্রুত বাবুগঞ্জের দিকে চলে যেতে দেখেছে বলে জানিয়েছে। এর আগে ৮ নভেম্বর জেলার হিজলা উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী হিজলা-গৌরবদী এলাকায় নয়টি মাছঘাটে একই কায়দায় ডাকাতি সংঘটিত হয়। স্পিডবোটগামী ডাকাত দল দেশি অস্ত্রের মুখে প্রায় ২০ লাখ টাকা লুট করে ফের স্পিডবোটে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায়ও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

সর্বশেষ খবর