মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

‘ভাইয়া আমাকে বাঁচান’ এরপরই লাইন বিচ্ছিন্ন

মাহবুবুর রহমান, শ্রীপুর (গাজীপুর)

‘মেয়ে চম্পাকে বিদেশ পাঠানোর মাস খানেক পর আমার ছেলে আল আমীন ফোন করলে চম্পা একবার বলে ‘‘ভাইয়া আমাকে বাঁচান’’। এরপর লাইন কেটে যায় এবং মোবাইলফানটি বন্ধ পাওয়া যায়। একটু ভালভাবে বাঁচার জন্য চম্পাকে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। এখন মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না। তারা আমার মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছে।’ বিদেশ পাঠিয়ে দীর্ঘদিন মেয়ের খোঁজ না পেয়ে কথাগুলো বলছিলেন চম্পার মা রোকেয়া। চম্পার (২৫) বাবা আব্দুল মালেক শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া উত্তরপাড়ার বাসিন্দা। অভিযুক্তের নাম মোবারক হোসেন। তার বাড়ি কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ডোয়াইনগরে। রোকেয়া বলেন, মেয়ের খবর জানতে চাইলে অভিযুক্তরা মিথ্যা মামলার হুমকি দেয়। চম্পার অশীতিপর বাবা আব্দুল মালেক জানান, তার মেয়ে পোশাক কারখানায় চাকরি করত। কুলফু নামে চম্পার পাঁচ বছরের একটি ছেলে আছে। বছর তিনেক আগে চম্পার স্বামী তাকে ফেলে চলে যায়। মালেক বলেন, অভিযুক্ত মোবারক ও তার শ্বশুরবাড়ির লোক মেয়েকে সৌদি আরবে ভাল বেতনে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেয়। এজন্য ৭০ হাজার টাকা খরচ বাবদ দাবি করে। মেয়ের পাসপোর্ট করে মোবারকের কাছে ৪০ হাজার টাকা দেই। বাকি টাকা সৌদি আরবে চাকরি করে পরিশোধের মৌখিক চুক্তি হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর মোবারক বিদেশ পাঠানোর কথা বলে চম্পাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে চম্পার ভাই নবী হোসেনের কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় সৌদিতে এ স্ট্যাম্প লাগবে বলে। চম্পার আরেক ভাই রিকশাচালক আল আমীন জানান, বাড়ি থেকে নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চম্পার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। যোগাযোগের জন্য মোবারকের কাছে ফোন নম্বর চাইলে নানা হুমকি দেয়। ভবিষ্যতে কখনো বোনের কথা জানার চেষ্টা করলে মামলা দিয়ে হয়রানি ও হত্যার ভয় দেখায়। অনেক কান্নাকাটির পর মোবারক একটি ভুয়া নম্বর দেয়। এর কিছুদিন পর দেয় আরেকটি নম্বর। ওই নম্বরে ফোন করলে চম্পা শুধু একবার বলে ‘ভাইয়া আমাকে বাঁচান’। এরপর লাইন কেটে যায়। ২২ অক্টোবর অভিযুক্ত তার ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে ফোন করে আড়াই লাখ টাকা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা দিলে বোনকে এনে দেবে বলে জানায়। এ ব্যাপারে জানতে শ্রীপুরে মোবারকের শ্বশুরবাড়িতে গেলে ওই বাড়ির কেউ কথা বলতে রাজি হননি। মোবারকের মোবাইলে কয়েকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেনি। শ্রীপুর থানার এসআই আবুল হাসান জানান, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযুক্তকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। শ্রীপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, ঘটনাটি তদন্তাধীন। মামলা রুজু হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর