সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

২১ বছরে দেখেনি লাভের মুখ

সমস্যায় জর্জরিত বগুড়া দুগ্ধ খামার

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

নানা সমস্যায় জর্জরিত বগুড়া শেরপুর উপজেলার দুগ্ধ ও গবাদি প্রাণি উন্নয়ন খামার। প্রয়োজনীয় জনবল, অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ ২১ বছরে লাভের মুখ দেখেনি সরকারি এ প্রকল্প। উল্টো কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়িত্বহীনতা, স্বেচ্ছারিতা ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতি বছর লোকসান গুনছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুগ্ধ ও গবাদি প্রাণি উন্নয়ন খামারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাণি উত্পাদন কর্মকর্তা আলী রেজা আহমেদ অভিযোগগুলো কৌশলে এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ‘খামারের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল। প্রাণিগুলো বেশ ভাল আছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয় না’। জানা যায়, ১৯৯৫ সালের জুনে কর্মকর্তা, শ্রমিকসহ ৬৮ জনবল ও ২৩৩টি পশু নিয়ে খামারটির যাত্রা। বর্তমানে এখানে কর্মকর্তাসহ ও হাজিরা শ্রমিকের সংখ্যা ৫৮। প্রাণি রয়েছে দুধেল গাভীসহ ২৩১টি। ২৪ একর জমিতে চাষ করা হয় তিন জাতের ঘাষ। ব্যক্তি খামারের একটি গাভী থেকে প্রতিদিন ১৪-১৫ লিটার দুধ পাওয়া গেলেও সরকারি এই খামারের অনুরূপ একটি গাভী থেকে সর্বাধিক সাড়ে চার লিটার দুধ মিলছে। এর কারণ অনুসন্ধানে গেলে উঠে আসে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার চিত্র। সরজমিনে দেখা যায়, ৬০০ গবাদি পশু ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন খামারের ১০টি শেডের মধ্যে অধিকাংশই ফাঁকা। ৩-৪টি শেডে ফাঁকা ফাঁকা করে রাখা পশুগুলো অনেকটা কঙ্কালসার হয়ে গেছে। খাবারের স্থানে কোনো খাবার নেই। খামারের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে দুধেল গাভী রাখার একটি শেডে দেখা যায়, সেখানে ড্রেনের তলা বরাবর থাকা পানি কয়েকটি গাভী জিহ্বা দিয়ে চেটে ক্ষুধার জ্বালা মেটানোর চেষ্টা করছে। পাশে পড়ে আছে গুরুতর অসুস্থ একটি গাভী। কয়েক কর্মচারী সেটিকে পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। সেখানে উপস্থিত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ সবই খামারের নিত্যদিনের চিত্র। সূত্রমতে, প্রতিদিন একটি দুধেল গাভীকে আড়াই কেজি দানাদার খাদ্য দেওয়ার কথা। এই খাদ্যের তালিকায় আছে গমের, ভুট্টা ও ডালের ভূষি, ছোলা, তিলের খৈল, সরিষার খৈল। কিন্তু নিয়মানুযায়ী এর কোনোটাই দেওয়া হয় না। খামারে পর্যাপ্ত ঘাস চাষ হলেও তা পশুগুলোকে না খাইয়ে বাইরে বিক্রি করা হয়। এভাবে প্রতিবছর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লোপাট হয় গো-খাদ্যের সিংহভাগ টাকা। বিশাল খামারের স্টোর সব সময়ই থাকে ফাঁকা। খামারে উত্পাদিত দুধেরও সঠিক হিসাব দেওয়া হয় না। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায় অনুপস্থিত থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর