রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মেলার নামে এমপির ভাইয়ের রমরমা র‌্যাফেল ড্র বাণিজ্য

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

মেলার নামে এমপির ভাইয়ের  রমরমা র‌্যাফেল ড্র বাণিজ্য

ঠাকুরগাঁওয়ে রুহিয়া আজাদ মেলায় র‌্যাফেল ড্র’র পুরস্কারের জন্য রাখা মোটরসাইকেল —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঠাকুরগাঁওয়ের ‘রুহিয়া আজাদ’ মেলায় রমরমা র‌্যাফেল ড্র বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের ভাই ইউপি চেয়ারম্যান অনিল চন্দ্র সেনের বিরুদ্ধে। এতে কেউ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ আবার কেউ সর্বস্ব খুইয়ে নিস্ব হচ্ছেন রাতারাতি। সেই সঙ্গে এলাকায় ব্যাপকহারে বেড়েছে চুরি ও ছিনতাই। প্রতিবারের ন্যায় এ বছর গত ১৩ নভেম্বর উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী রুহিয়া আজাদ মেলা শুরু হয়। মেলা উদ্বোধন করেন সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। জানা যায়, আশির দশকে শুরু এ মেলায় আগে কৃষি পণ্যের সমাগম ঘটলেও গত কয়েক বছর ধরে সেসব আর দেখা যায় না। এখন গুরুত্ব বেড়েছে বিভিন্ন যাত্রাপালার। আর যাত্রার নাম করে চালানো হয় অশালীন নৃত্য। তবে এবারের চিত্রটা ভিন্ন। এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের উদ্যোগে এ বছর যাত্রাপালায় অশ্লীলতা স্থান পায়নি। তবে সংসদ সদস্যের ভাই মেলায় র‌্যাফেল ড্র বাণিজ্য চালু রেখেছেন। প্রতিদিন ২৫ লাখ টাকার ধামাকা অফার ঘোষণা করে জেলায় তিন হাজার ৭৫০টি বুথ ও ১১০টি ভ্যান ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে ১০ টাকা মূল্যের লটারি বিক্রি করা হচ্ছে। এরপর রাত ১১টায় শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নিজ এলাকা রুহিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে লটারির ড্র। পাশের জেলা পঞ্চগড়, নীলফামারী ও দিনাজপুরের লোকজনও এই র‌্যাফেল ড্রতে অংশ নিচ্ছেন। কোনো দিন প্রথম পুরস্কার তিনটি মোটরসাইকেল। কোনো দিন জনপ্রতি দুই লাখ করে তিনজনকে ছয় লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য পুরস্কার তো আছেই। ঢোলার হাট এলাকার কৃষক ইউসুফ আলী বলেন, লটারির কারণে সন্ধ্যার পর বাড়িতে ছেলেরা থাকে না। গভীর রাত পর্যন্ত রুহিয়ায় র‌্যাফেল ড্র দেখতে যায়। সাইকেল মেকার আবুল বলেন, ‘লটারির তানে (জন্য) বাড়িত টাকা রাখা যায় না। ছেলেরা পকেট থেকে টাকা নিয়ে যায়। এ কারণে এলাকাত চুরিও বারিছে।’ স্কুলশিক্ষক হাসমদ্দিন জানান, মেলা শুরুর পর থেকে রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারছি না। এলাকায় চুরি বেড়ে গেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের বার্ষিক পরীক্ষার সময় এমন কার্যক্রম বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। জোহুরা নামে এক গৃহবধূ জানান, আমাদের বস্তির মেয়েরা বাড়ির চাল বিক্রি করে লটারি কিনছে। গভীর রাত পর্যন্ত ছেলে-মেয়ে মেলায় থাকছে। এ ব্যাপারে এমপির ভাই অনিল চন্দ্র  জানান, প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই লটারি চালানো হচ্ছে। এতে অসুবিধার কিছু নেই। রমেশ চন্দ্র সেন জানান, ছেলে-মেয়েকে বাড়িতে আটকে রাখার দায়িত্ব অভিভাবকদের। তাদের কারণে যে এটা বন্ধ করে দিতে হবে এমন তো না। তাছাড়া এটা গভীর রাত পর্যন্ত চলে না। তাড়াতাড়িই শেষ হয়। অভিভাবকরা সচেতন হলেই সমাধান হয়ে যাবে। এর উপার্জন থেকে ১০০ প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা প্রদান করা হয় বলেও দাবি করেন এমপি। পুলিশ সুপার ফারহাত আহম্মেদ জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। মেলার নামে লটারি চললে ব্যবস্থা নেব।’

সর্বশেষ খবর