মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি পাঁচ গ্রামের মানুষ

প্রতিবাদ করলেই হামলা বহু পরিবার গ্রামছাড়া

নড়াইল প্রতিনিধি

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পারবিষ্ণুপুর, ভোমবাগ, বুড়ীখালিসহ পাঁচটি গ্রামের মানুষ সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রের হাতে জিম্মী হয়ে পড়েছেন। নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে একাধিক মামলার আসামি মফিজুর মোল্যা মফিজ ও জামাল হোসেন কয়েক বছর ধরে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এদের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় অনেকের প্রাণ হারানোর উপক্রম হয়েছে। অব্যাহত চাঁদাবজি, হামলা, হুমকিতে ভিটেমাটি ফেলে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বহু পরিবার। থানায় জানিয়েও লাভ হচ্ছে না। তবে পুলিশের দাবি পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পারবিষ্ণুপুর গ্রামের অনেক বাড়ির বসতঘর, রান্নাঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনার টিনের বেড়া, চালা কুপিয়ে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে। বহু ঘর তালাবদ্ধ। এলাকায় পুরুষ মানুষ নেই। চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ নিয়ে এসব পরিবারের মহিলারা সাংবাদিকদের জানান তাদের দুর্দশার কথা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দীনের স্ত্রী হাসিনা, সামাদ কাজীর স্ত্রী ইলা রানী, হাসিম মোল্যার স্ত্রী সামী বেগমসহ কয়েকজন অভিযোগ করেন, আতঙ্ক, অনিশ্চতা আর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে তাদের একেকটি দিন কাটছে। রাত নামলেই সন্ত্রাসীরা বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, স্যালো মেশিন, মাড়াই মেশিন লুটে নিচ্ছে। ভয়ে পুরুষরা বাড়ি ফিরতে না পারায় পাকা ধান ক্ষেতে নষ্ট হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা কেটে নিয়েছে কারও ধান। শত শত একরের আসন্ন বোরো আবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, গুম-খুন, অস্ত্র আইনসহ ৬টি মামলার আসামি কালিয়ার পুরুলিয়া ইউনিয়নের ভোমবাগ গ্রামের জালাল বিশ্বাসের ছেলে মফিজুর মোল্যা মফিজ ও বুড়ীখালি গ্রামের নুরো মোল্যার ছেলে জামাল হোসেন ধলা। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি বর্ষণ, লুটপাট, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, জমি দখল, মাদক ব্যবসাসহ সব অপকর্মই করেন তারা। প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিগত দিনে ধলা-মফিজ ও তাদের সহযোগীরা প্রকাশ্যে গুলি করে বুড়ীখালি গ্রামে কালু, নাইমুর, হাবি, আকবর, রাজু, মুন্নি ও পারবিষ্ণুপুর গ্রামে সনি, বনি, আনিসুলকে গুরুতর আহত করে। কুপিয়ে পঙ্গু করে দেওয়া হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাবের মোল্যাকে। জাবের বলেন, ‘ধলা-মফিজের অপকর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় আমার এ পরিণতি। পঙ্গু হয়েও জীবনের নিরাপত্তা না থাকায় বাপ-দাদার ভিটায় ফিরতে পারিনি।’

পুরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মনি জানান, ধলা ও মফিজের নেতৃত্বে পারবিষ্ণুপুর, ভোমবাগ, বুড়ীখালিসহ সংলগ্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে। প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিনে দিনে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদের ভয়ে দেড়শতাধিক পরিবার ভিটে ছাড়া হয়েছে। কালিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোল্যা ইমদাদুল হক বলেন, ‘ধলা ও মফিজের অত্যাচারে মুক্তিযোদ্ধাসহ, শতাধিক আওয়ামী পরিবার গ্রামছাড়া। একাধিক মামলার আসামি হওয়া সত্বেও পুলিশ এদের গ্রেফতার করছে না।’ কালিয়া থানার ওসির দাবি, এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

সর্বশেষ খবর