রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নরসিংদীতে ভর্তি ও কোচিং বাণিজ্য

চকরিয়ায় অতিরিক্ত টাকা আদায়

নরসিংদী ও চকরিয়া প্রতিনিধি

‘স্যারকে টাকা দিয়ে আমার বান্ধবী স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তার বাবা স্যারকে ম্যানেজ করেই তাকে ভর্তি করিয়েছে। তুমি পারনি কেন? আব্বু তোমার কাছে কি টাকা ছিল না।’ কথাগুলো বাবাকে বলছিল নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ষষ্ঠ শ্রেণির রিয়াজুল জান্নাৎ তৃষা। বাবা খসরু মাহমুদ বলেন, ‘টাকা দিয়ে কি হবে। মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। ভাবছি সবকিছু ছেড়ে স্কুলের ব্যবসা খুলবো।’ খসরুর মেয়ে এবার পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। সম্প্রতি নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে লাখ লাখ টাকা ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। অভিভাবকদের ভাষ্য, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী প্রতি নেওয়া হয়েছে ২০-৫০ হাজার টাকা। ফলে ভর্তিবঞ্চিত হয়েছে প্রকৃত মেধাবীরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ভর্তি মৌসুম এলেই স্কুলের শিক্ষকরা মেতে উঠেন কোচিং বাণিজ্যে। ফলে বাধাগ্রস্ত হয় স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম। তবে কোচিং ও ভর্তি-বাণিজ্যের কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষক গৌতম মিত্র বলেন, ‘ভর্তিপরীক্ষার খাতা দেখেছেন বয়েজ স্কুলের শিক্ষকরা। ফল এনডিসি ও একজন ম্যাজিস্টেটের উপস্থিতিতে সফটওয়ারে ইনপোর্ট দেওয়া হয়েছে।’ প্রধান শিক্ষক আরও জানান— স্কুলের অভ্যন্তরে কোনো কোচিং হয় না। বাইরে হয় কিনা জানা নেই। জানা যায়, পড়াশোনার মান ভাল হওয়ায় শহরের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। আর এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন স্কুলের কয়েক শিক্ষক। ভর্তি মৌসুম এলেই তারা কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা। ভর্তির সুযোগ পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা ছুটছেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের কোচিং সেন্টারে। স্বজনপ্রীতি ও কোচিংয়ের সুবাদের ভর্তির সুযোগও মিলছে প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর। ওই স্কুলে ভর্তি হয়েছে এমন এক শিক্ষার্থীর অভিবাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তার মেয়েকে ভর্তির জন্য স্কুলের এক শিক্ষককে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন। শুধু তিনি নন। ভর্তি পরীক্ষার ফল ঘোষণার সময় বেশকিছু অভিভাবককে এ ধরনের কথা বলতে শোনা গেছে। এদিকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শাহ উমরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি ফি আদায় করছে ৬৫০ টাকা। কোরক বিদ্যাপীঠ ও চকরিয়া গ্রামার স্কুলে একই ক্লাসে ভর্তি হতে নিচ্ছে এক হাজার ৬৫০ টাকা করে। চকরিয়া সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ১২১০, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ১১৫০ এবং চকরিয়া কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে নেওয়া হচ্ছে এক হাজার ৭৫০ টাকা। অনুরূপভাবে উপজেলার ৩৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিতে আদায় করা হচ্ছে ৬৫০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, মিউনিসিপ্যাল ও অন্য এলাকাভেদে ৩৫০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত ফি আদায় করা যাবে।

কোরক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক নুরুল আখের বলেন, ‘সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পৌর এলাকায় দুই হাজার টাকা ভর্তি ফি আদায়ের নিয়ম থাকলেও আমরা নিচ্ছি ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকা।’ শাহ উমরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের স্কুলে বোর্ডের নিয়মনুযায়ী ফি নেওয়া হচ্ছে।’ চকরিয়ার ইউএনও সাহেদুল ইসলাম বলেন, কোনো স্কুলে কত ভর্তি ফি আদায় হচ্ছে আমার জানা নেই। বিদ্যালয়গুলো সরকারি নির্দেশনা মানছে কিনা দেখা হবে।’

সর্বশেষ খবর