বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

শ্রমিকের ‘জীবনের মূল্য’ ৬০ হাজার টাকা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

অভাবের তাড়নায় বয়লার মিলে কাজ করতে গিয়ে বয়লারের ত্রুটির কারণে জীবন দিতে হয়েছে স্বামী-স্ত্রীসহ তিন শ্রমিকের। চাতাল মালিকের পক্ষ নিয়ে মাতবররা নিহতদের স্বজনের অসহায়ত্বের সুযোগে শালিস বৈঠকে বসেন। বৈঠকে প্রতিজন শ্রমিকের জীবনের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬০ হাজার টাকা। পুলিশ বলছে, ওই ঘটনায় কেউ অভিযোগ না করায় তারা ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ঘটনাটি ঘটে সদর উপজেলার শিয়ালকোল এলাকায়। জানা যায়, গত ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শিয়ালকোলের একটি চাতালে কাজ করছিলেন পাঁচ শ্রমকি। এ সময় বয়লার বিস্ফোরণে শিয়ালকোল গ্রামের ছবের, তার স্ত্রী জাহানারা ও সাইদের স্ত্রী সাকেরা দগ্ধ হন। চিকিত্সাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে মঙ্গলবার বিকালে তারা মারা যান। বুধবার সকালে তিনজনের লাশ সিরাজগঞ্জ পৌঁছলে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। লাশ রেখেই স্থানীয় মুরুব্বিরা শুরু করেন দেনদরবার। এ সময় মামলা না করার জন্য পরিবারের সদস্যদের চাপ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে বৈঠক বসে শ্রমিকপ্রতি ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে। প্রত্যক্ষদর্শী আশরাফসহ কয়েকজন জানান, দুর্ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আগুন দেওয়া অবস্থায় বয়লারটিতে পানি চুইয়ে পড়ছিল। এ সময় চাতাল মালিক শামিম দুটি পাইপ খুলে গ্যাস বের করে নেকড়া দিয়ে বয়লারটি বেঁধে পুনরায় কাজ করতে বলেন। গ্যাস পাইপ দুটি বন্ধ করে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই বয়লারটি বিস্ফোর ঘটে। মূলত বয়লারে ত্রুটির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহত ছবেরের ভাই ও ভাতিজা জানান, বুধবার সকালে মুরুব্বিরা বলল তোমরা মামলা করো না, মামলায় টিকে থাকতে পারবে না; বরং আমরা মীমাংসা করে দিচ্ছি। তাছাড়া তোমরা গরিব-অসহায় কিভাবে মামলা চালাবে? সে জন্য মুরুব্বিদের কথা মেনে নিয়েছি। সাকেরার শিশুপুত্র জাকারিয়া জানায়, ‘প্রায় ১০ বছর আগে বাবা মারা গেছে। মা চাতালে কাজ করে তিন ভাই-বোনকে পালত। মাও চলে গেল। এখন আমরা কোথায় দাঁড়াবো, কে আমাদের দেখবে। স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা জামাল তালুকদার জানান, নিহতের স্বজনদের কোনো দাবি-দাওয়া ছিল না। তাই পুলিশের অনুমতি নিয়ে লাশ দাফন করা হয়েছে। চাতাল মালিকের ভাই আব্দুল ওয়াদুদ জানান, চাতালটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। যন্ত্রপাতির ত্রুটি ছিল না। মূলত গ্যাস পাইপ বন্ধের জন্য এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

সর্বশেষ খবর