সোমবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাফার গুদামে জমাটবাঁধা সার

কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর বাঘাবাড়ী ঘাটে বাফার গুদামে রাখা আড়াই হাজার টন ও বন্দরে খোলা জায়গায় রাখা প্রায় তিন হাজার টন ইউরিয়া সার শক্ত ও জমাটবেঁধে গেছে। বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ সারগুলো হ্যামার দিয়ে গুঁড়ো করে রি-প্যাকিং করে সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়ায় কৃষক-ডিলাররা চরম ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন। কৃষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন জমাটবাঁধা সারগুলো হ্যামার দিয়ে গুঁড়ো করে পুনঃ প্যাকিং করায় সারের রাসায়নিক কার্যক্ষমতা অনেকাংশে বিনষ্ট হয়ে গেছে। এ সার ব্যবহারে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যাবে না। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, রি-প্যাকিং করলে সারের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

সার পরিবহন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাল্ক এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি শাহান শাহ জানান, বিসিআইসির নির্দেশনা অনুযায়ী পুনরায় ওই সার গুঁড়ো করে রি-প্যাকিং করা হচ্ছে। বাঘাবাড়ী বাফার গুদামের ইনচার্জ মো. সোলায়মান জানান, গুদামের জমাটবাঁধা সারগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে না। নতুন আমদানি করা সার সরবরাহ করা হচ্ছে। জমাটবাঁধা সারগুলো রি-প্যাকিং করা হলে গ্রহণ করা হবে। বিসিআইসির বগুড়া আঞ্চলিক অফিসের কর্মকর্তা মো. শামিম আক্তার জানান, জমাটবাঁধা সারের নমুনা ঢাকার পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে গুণগত মান ঠিক রয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েই তা রি-প্যাকিং করে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আরশেদ আলম জানান, ডিলারদের অভিযোগের ভিত্তিতে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি বাঘাবাড়ী বাফার গুদাম পরিদর্শন করে সেখানে রক্ষিত ৯ হাজার টন সারের মধ্যে ২ হাজার ৬৫০ টন সার জমাটবাঁধা অবস্থায় পায়। পরীক্ষা করে এগুলোর গুণগত মান ভালো পাওয়া গেছে। তাই গুঁড়ো করে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এ জন্য কৃষকদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই কর্মকর্তা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাঘাবাড়ী বন্দরের সার সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের পার্বতীপুর, রংপুর, পুলহাট, চরকাই, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মহেন্দ্রনগর, শান্তাহার ও কুড়িগ্রামের ১৪টি বাফার গুদামে রাখা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রোটন ট্রেডার্স, বাল্ক ইন্টারন্যাশনাল, নবাব অ্যান্ড কোং, গ্রামসিকো ও রেক্স ইন্টারন্যাশনাল সারগুলোর পরিবহনের দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু সম্প্রতি চীন থেকে আনা প্রায় ১০ হাজার মে. টন সার গুদামে জায়গা না থাকায় খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন খোলা আকাশে থাকার কারণে অধিকাংশ সার জমাটবেঁধে গেছে। এ ছাড়াও অব্যবস্থাপনার কারণে গুদামে রাখা প্রায় আড়াই হাজার টন সার জমাটবেঁধে যায়।

এ সারগুলো কৃষকদের মাঝে সরবরাহের পাঁয়তারা করলে ডিলার ও কৃষকরা কৃষি অধিদফতর বরাবর আবেদন করেন। পরে কৃষি বিভাগ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কিন্তু কমিটিও জমাটবাঁধা সারগুলো গুঁড়ো করে রি-প্যাকিং করে সরবরাহের নির্দেশ দেয়। এতে কৃষকের মাঝে ভালো উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ খবর