বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

‘গলাকাটা সিন্ডিকেট’ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে, দিশাহারা গ্রাহক

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে দলিল লেখক সমিতির নামে ‘গলাকাটা সিন্ডিকেট’ গঠন করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ভুক্তভোগীরা গলাকাটা সিন্ডিকেট ঠেকাতে দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। জানা যায়, ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় এ সিন্ডিকেট বছরের পর বছর অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এতে সাধারণ দলিল লেখকদের ভাগ্য পরিবর্তন না হলেও সমিতির অনেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। কথিত সেরেস্তা খরচের নামে সমিতির বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ মানুষ। এ সব সমিতি সম্পূর্ণ অবৈধ ও ভোক্তা অধিকার আইনের পরিপন্থী বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাব-রেজিস্ট্রার জানান, গত বছরের নিয়মানুযায়ী একটি দলিল রেজিস্ট্রি করতে সরকারকে পৌর এলাকায় লাখে সাড়ে ১১ ও পৌরসভার বাইরে সাড়ে ৯ হাজার টাকা ফি দিতে হয়। কিন্তু এই সমিতি পৌর এলাকায় লাখে ১৬ ও ইউনিয়নে নিচ্ছে ১৫ হাজার করে। রসিদবিহীন এই টাকা দলিল লেখক সমিতির কর্মকর্তারা কোনো ব্যাংক একাউন্টে রাখেন না এবং সাধারণ সদস্যদেরও হিসাব দেওয়া হয় না। অফিসকে একটি অংশ দিয়ে বাকি টাকা সপ্তাহ শেষে ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, নিরুপায় হয়ে এ টাকা দিতে হচ্ছেন জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা। সমিতির বিরুদ্ধে গেলে জমি রেজিস্ট্রি করা হয় না। এমনকি সাব রেজিস্ট্রাররাও লেখক সমিতির কাছে জিম্মি। এই সমিতি গঠন হয় অবৈধভাবে। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা বলে দেন অমুক সভাপতি ও অমুক সম্পাদক। সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এ ধরনের একটি গলাকাটা সমিতির সভাপতি আক্তার হোসেন ও সম্পাদক আলম। এই সিন্ডকেট সদর উপজেলার জমি ক্রেতা-বিক্রেতাকে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নিলেও প্রতিবাদ করার কেউ নেই। শৈলকুপায় দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নান্নু মোল্লা ও সম্পাদক মনিরুল ইসলাম। তারাও সমিতির নামে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। হরিণাকুণ্ডুতে দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি হিসেবে ওয়াজেদ আলী ও সম্পাদক বিশারত আলী দায়িত্ব পালন করছেন। এখন এ সমিতির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। মহেশপুর একতা দলিল লেখক সমিতি নামে কমিটির সভাপতি-সম্পাদক হিসেবে টাকা হাতাচ্ছেন জাকির হোসেন ও তাজুল ইসলাম। স্থানীয় এমপি নবী নেওয়াজ এ কমিটির বিরোধী হলেও তার নিষেধ মানছে না। কালীগঞ্জে দলিল লেখক সমিতির গঠন করে আধিপত্য বিস্তার করছেন আব্দুল হক ও নাছির চৌধুরী। সমিতির কথা না শুনে কালীগঞ্জের একাধিক সাবরেজিস্ট্রার অপদস্ত হয়েছেন। কোটচাঁদপুর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ইসমাইল হোসেন ও সম্পাদক সন্তোষ কুমার সেরেস্তা খরচের নামে অতিরিক্ত ফি আদায় করছেন। বিভিন্ন সূত্র জানায়, দলিল লেখক সমিতির নামে জোর করে টাকা আদায় বন্ধ করতে জেলা-উপজেলা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু প্রশাসনের কাগুজে এ সিদ্ধান্ত কেউ আমলে নেয়নি। ঝিনাইদহের কোনো দলিল লেখক সমিতির সভাপতি বা সম্পাদক এ নিয়ে কথা বলতে চাননি। জেলা রেজিস্ট্রার বীর বিক্রম চাকমা জানান, সরকারি আইন মেনে যে কেউ সমিতি করতে পারে। তবে দলিল লেখক সমিতির নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় বেআইনি।

সর্বশেষ খবর