মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

গুদামে চাল দিতে আগ্রহ নেই চাতাল মালিকদের

শেরপুর প্রতিনিধি

সরকার নির্ধারিত দামের সঙ্গে বাজারদর না মেলায় শেরপুরে আমন সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পথে। গত বোরো মৌসুমেও সরকারি সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। যেসব চাতালমালিক চাল দিতে সরকারের খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি করেছেন তাদের গুনতে হয়েছে লোকসান। আবার কেউ চাল না দিয়ে ব্যাংক ড্রাফট মার খেয়েছে। চাতাল মালিকদের ভাষ্য, তারা বাজারেও ধরা খাচ্ছেন আবার সরকারি সংগ্রহেও গুনতে হচ্ছে লোকসান। নানামুখী লোকসানের কারণে অনেকে পথে বসেছেন। দু-চারজন টিকে আছেন কোনোভাবে। জানা যায়, বছরে দুবার বাজারের চেয়ে কিছু বেশি দাম ধরে সরকার চাতাল মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করে। চাতাল মালিকরাও আশায় বুক বেঁধে থাকেন খাদ্য বিভাগে চাল সরবরাহের মাধ্যমে কিছু লাভ করবেন বলে। কিন্তু গত তিন বছর এখানেও গুনতে হচ্ছে লোকসান। পরপর লোকসানের কারণে অনেকে সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে যাচ্ছে না। কেউ কেউ চুক্তি করেও চাল দেয়নি। ফলে খাদ্য বিভাগকে দেওয়া ব্যাংক ড্রাফট আইনানুযায়ী মার খেয়েছে। জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত বোরো মৌসুমে শেরপুরে প্রতি কেজি ৩২ টাকা দরে দুই দফায় ২৪ হাজার ৫৭৬ মেট্রিক টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম দফায় জেলার ৬৯১টি চাতাল মালিকের মধ্যে ৬৩৯ জন খাদ্যবিভাগের সঙ্গে চুক্তি করে ১৬ হাজার ৯ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করলেও পরের দফায় কেউ সাড়া দেয়নি। অর্থাৎ বোরো মৌসুমে আট হাজার ৫৬ মেট্রিক টন চাল কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। চাতাল মালিক ও খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, প্রথম দফায় সরকারি দরের সঙ্গে বাজার দর সমান থাকলেও কয়েকদিন পরই বাজারে চালের দাম হয়ে যায় প্রতি কেজি ৩৩-৩৪ টাকা। আরও পরে তা দাঁড়ায় ৩৫-৩৬ টাকায়। লোকসানের পরিমাণ বেশি হওয়ায় দ্বিতীয় বার সরকারকে চাল দিতে কেউ রাজি হননি। চলমান আমন সংগ্রহ অভিযানে সরকার প্রতিকেজি ৩৩ টাকা দরে ১২ হাজার ৬০৯ মেট্রিক টন সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। ১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এ অভিযানের সময়ই বাজারে মোটা চালের দাম ছিল সাড়ে ৩৪ টাকা। এখন কোনো চালের কেজিই ৩৬-৩৭ টাকার নিচে নেই। যারা এখনো দিতে পারেননি তাদের লোকসান হবে কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা। ফলে চুক্তি করা ব্যবসায়ীরা দিতে পারছেন না তিন হাজার ৭৭ মেট্রিক টন চাল। খাদ্য বিভাগ বারবার তাগাদা দিলেও সাড়া মিলছে না। ব্যবসায়ী আব্বাস আলী জানান, ধান কিনে উৎপাদন খরচ যোগ করে কোনো অবস্থাতেই সরকারি মূল্যের সঙ্গে মিলছে না। শহরের বটতলার আনোয়ার হোসেন বলেন— ‘প্রতিবারই লোকসান হচ্ছে। এভাবে হলে আর চুক্তি নয়।’ চাতাল ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন জানান, সাধারণ ব্যবসায়ীরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্চ্ছে। মূল্য নির্ধারণ আরও ভেবেচিন্তে করা দরকার। জেলা চাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আছাদুজ্জামান রৌশন জানান, শেরপুরের অর্থনীতি নির্ভর করে চাতাল শিল্পের ওপর। কয়েক বছর ধরে চাতাল ব্যবসায় এমনিতেই ধস নেমেছে। তার ওপর সরকারি চাল সংগ্রহে বারবার লোকসানে ব্যবসায়ীরা এখন দিশাহারা। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহবুবুর রহমান বলেন, আশা করি চুক্তি করা চাল আমরা পেয়ে যাবো। তবে অবশিষ্ট চাল দিতে নতুন করে ব্যবসায়ীরা চুক্তি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

সর্বশেষ খবর