শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

৬৫ বছরের নুরজাহান তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

৬৫ বছরের নুরজাহান তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী

স্কুল ছুটি শেষে দুই নাতি-নাতনির সঙ্গে বাড়ি ফিরছেন নুরজাহান বেগম —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নুরজাহান বেগম মধু। ৬৫ বছর বয়সে তিনি স্কুলে যাচ্ছেন। তার ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে। বড় ছেলের মেয়ে আছমা আক্তার সুমি এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। অন্য ৩ নাতি,নাতনি সাইফুল ইসলাম, মুশফিকুর রহমান ও মিম গ্রামের মনপাল ফুলকলি বিদ্যানিকেতনে পড়ে। তাদের সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছেন মধু। ২৩ জানুয়ারি তিনি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন। মধু কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মনপাল গ্রামের আবদুল করিমের স্ত্রী। বাবার বাড়ি একই গ্রামে। কয়েকদিনে তিনি স্কুলের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর প্রিয় দাদি হয়ে উঠেছেন। স্কুলের ১০ জন শিক্ষক রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিনের বয়স ৬৩ বছর। প্রধান শিক্ষক থেকেও ছাত্রী মধু বয়সে বড়। প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন জানান, নুরজাহান বেগম মধুর এ বয়সে লেখাপড়ার আগ্রহ দেখানোর বিষয়টি ব্যতিক্রম। আমাদের শিক্ষকরা যত্ন দিয়ে তাকে পাঠদান করাচ্ছেন। স্কুল পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি মো.মাসুদুল হক বলেন, অল্প সময়ে শিক্ষার্থীরা তাকে আপন করে নিয়েছে। আমরা তার বেতন মওকুফ করে দিয়েছি। তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। নুরজাহান বেগম মধু বলেন, আমাদের মনপাল গ্রামে প্রাথমিক স্কুল ছিল না, এখনো নেই। দূরে গিয়ে পড়ার সামর্থ্যও ছিল না। কম বয়সে বিয়ে হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের কিছু লেখাপড়া করিয়েছি। এখন নাতি-নাতনিরা লেখাপড়া করছে। তাদের দেখে আমারও পড়তে ইচ্ছে করছে। আমি ৩০ বছর ধরে এ এলাকায় ধাত্রীর কাজ করছি। বিভিন্ন সংস্থার প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তারা বলেছেন, আমি কিছু লেখাপড়া করলে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। তাই স্কুলে ভর্তি হয়েছি। আমি ৫ম শ্রেণি পাস করতে চাই। চোখের সমস্যার জন্য পড়তে পারি না। ডাক্তার বলেছেন, ছানি অপারেশন করতে হবে। এতো টাকা তো আমার কাছে নেই। লাকসাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, আমরা তার সাফল্য কামনা করি। সমাজসেবা বা মহিলা বিষয়ক কার্যালয় তার চিকিৎসার বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মজিবুর রহমান বলেন, ছানি অপারেশনের বিষয়ে কুমিল্লা আলেখারচর এলাকার চক্ষু হাসপাতালে যোগাযোগ করা  হলে তিনি চিকিৎসা সহায়তা পেতে পারেন।

সর্বশেষ খবর