শিরোনাম
রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেড়যুগ ধরে শেকলে বাঁধা দুই বোনের জীবন

শফিক জামান, জামালপুর

দেড়যুগ ধরে শেকলে বাঁধা দুই বোনের জীবন

জরাজীর্ন টিনের একচালা ঘর। ভেতরে উৎকট গন্ধ। ধুলোবালি, খড়ের ছড়াছড়ি। কোনো সুস্থ মানুষ ভাবতেই পারবেন না এমন একটি ঘরে দুদণ্ড থাকার কথা। সেখানেই দেড় যুগের বেশী সময় পায়ে শেকল বাঁধা অবস্থায় আছেন দুই বোন। ঘটনাটি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের। বড় বোন পাপড়ির বয়স ৩৩ আর ছোট বোন অনন্যার ৩০। চিকিৎসার অভাব আর পুষ্টিহীনতায় তাদের শরীর কঙ্কালসার। হাটার শক্তি হারিয়েছেন অনন্যা। পাপড়ির স্বপ্ন ছিল বড় শিল্পী হবেন। অনন্যা স্বপ্ন দেখতেন প্রকৌশলী হওয়ার। পাপড়ি এখনো মানুষ কাছে পেলে গান ধরেন। কথা বলেন সুস্থ মানুষের মতো। অনন্যা ফ্যাল ফ্যাল চোখে চেয়ে থাকেন । জানা যায়, এক সময় অন্য দশটি শিশুর মতো হেসে খেলে পড়াশুনায় কাটছিল দুই বোনের জীবন। ১৯৯৯ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পাপড়ি আর ২০০১ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকতে অনন্যার আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। একপর্যায়ে তারা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বন্ধ হয় লেখাপড়া। সামাজিকভাবে বিব্রত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে স্বজনরা তাদের আটকে রাখেন। পায়ে পরান শেঁকল। সেই থেকে শেঁকলেবন্দী জীবন। এর মধ্যে বাবা-মাকেও হারিয়েছেন। ছোট দুই কিশোর ভাই ছাড়া দরিদ্র পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। চাচা আব্দুল হাই জানান, মানসিক ভারসাম্য হারানোর পর দুই বোন এদিক সেদিক চলে যেতো। নিরাপত্তার কথা ভেবে ঘরে আটকে রাখতে হতো তাদের। অবস্থার অবনতি হলে পায়ে শেঁকল পরানো হয়। পাপড়ি ও অনন্যার ভাই সম্রাট (১৯) জানান, তার বাবা আব্দুল মান্নান পরিসংখ্যান বিভাগে ছোট পদে চাকরি করতেন। ব্রেন স্ট্রোক করে আট বছর অসুস্থ থাকার পর ২০১০ সালে মারা যান। তখন তার বয়স ১২ আর ছোট ভাই পথিকের বয়স ছিল আট বছর। মা মারা গেছেন ২০১৩ সালে। তাদের সামান্য জমি ছাড়া কিছু নেই। পথিক নবম শ্রেণিতে পড়ে। সম্রাট আরও জানান, জমি থেকে যা পাই তা দিয়ে চাজনের তিন বেলা খাবার জোগানোই কঠিন। জমির কাজ, রান্নাবান্নাসহ সবই করতে হয় তাকে। দুই বোনকে শেঁকলে বাঁধা দেখতে কষ্ট হয়। কিন্ত চিকিৎসা করানোর সামর্থ নেই। স্থানীয় আদারভিটা হাই স্কুলের শিক্ষক সান্তেজা খানম বলেন, ‘পাপড়ি ও অনন্যা অত্যন্ত মেধাবী ছিল। পড়াশুনার পাশাপশি তারা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল। আরেক শিক্ষকা নাজমা রহমান জানান, যথাযথ চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠতে পারে দুই বোন। ফিরে আসতে পারে স্বাভাবীক জীবনে।

সর্বশেষ খবর