শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাথর ভাঙা মেশিনের ধুলায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শ্রমিক

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

পাথর ভাঙা মেশিনের ধুলায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শ্রমিক

দেশের সর্ব উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা পঞ্চগড় জেলার শ্রমিকদের  একটি বড় অংশ পাথর ভাঙার কাজের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু স্বাস্থ্য সম্পর্কে মালিক শ্রমিক কেউই সচেতন না থাকায় ধুলোবালি বাহিত সিলিকোসিসসহ ভয়াবহ রোগ ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। নাক এবং শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরের ভিতরে ধুলোবালি ঢুকে পড়ায় নানা রোগ বালাই নিয়ে প্রতিনিয়ত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে তাদের। এ ক্ষেত্রে পাথর ভাঙা মেশিনে কাজ করার সময় মুখে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ  দিয়েছেন চিকিৎসকরা।  জেলার প্রধান খনিজসম্পদ পাথর শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে পঞ্চগড় জেলার প্রায় কয়েক লাখ মানুষ। এমন অনেকেই আছেন যাদের জীবিকার পুরোটাই পাথরের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু পাথর উত্তোলন ও পাথর ভাঙার জন্য  সুষ্ঠু পরিবেশ ও পরিকল্পনা না থাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে পাথর শ্রমিকদের বিরাট অংশ। যাদের অধিকাংশই নারী শ্রমিক। জেলার সমতল ভূমি খনন করে ভূগর্ভ ও নদী থেকে পাথর উত্তোলন করা হয়। আবার ভারত থেকেও আমদানি করা হয় পাথর। এসব পাথর ভাঙার কাজে যুক্ত রয়েছেন প্রায় লক্ষাধিক দরিদ্র শ্রমিক। মেশিনের মাধ্যমে পাথর ভাঙার সময় ভাঙা পাথরের গুঁড়ো ও ধুলোবালি নির্গত হয়ে চারপাশে ছেয়ে যায়। আর এসব ধুলোবালির মধ্যেই কাজ করতে হয় শ্রমিকদের। সারাদিন কাজ করার পর রাতে মাথা ব্যথা, সর্দি, কাঁশি, শ্বাসকষ্ট, ক্ষুধাহীনতা, ও নিদ্রাহীনতায় ভোগেন অধিকাংশ শ্রমিক। ভিতরগড় মডেল হাট এলাকার নারী শ্রমিক বেগম আক্তার (৪৫) জানান, ভাঙা মেশিনে কাজ করে বাড়ি ফিরে রাতে ঘুম হয় না। কাঁশি হয়। শ্বাসকষ্ট হয়। ডাক্তার দেখাই, ওষুধ খাই কিন্তু রোগ ভালো হয় না। ভজনপুর এলাকার শ্রমিক সমিজুল ইসলাম জানান, ক্ষুধা লাগে না। বুক ঘর ঘর করে। সর্দি লাগে, কাশি হয়। গরিব মানুষ এই কাজে ভালো টাকা পাওয়া যায়। তাই কষ্ট হলেও কিছু করার নেই। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজ-উ-দৌলা পলিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে  বলেন, ইদানীং প্রচুর শ্রমিক ধুলোবালি বাহিত রোগ বালাই নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। পাথর ভাঙা মেশিন থেকে উত্পন্ন পাথরের গুঁড়ো ও ধুলোবালি সরাসরি নিঃশ্বাস এবং নাক ও মুখের  মাধ্যমে শ্রমিকদের শরীরে প্রবেশ করছে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর। এ কারণে শ্রমিকরা শ্বাসকষ্ট, কাশি, সর্দি এমনকি ভয়াবহ সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তিনি পাথর ভাঙা মেশিনে কাজ করার সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। শ্রমিকদের অনেকেই দীর্ঘদিন কাজ করার পর শ্বাসকষ্ট,সর্দি জ্বরসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হলেও মালিকদের পক্ষ থেকে কোনো সচেতনামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে জানান শ্রমিকরা।

সর্বশেষ খবর