শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

রংপুরে কমছে বোরো আবাদ

‘খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে’

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

রংপুর অঞ্চলে বোরো ধানে চাষ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার হেক্টর করে জমিতে বোরো চাষ হচ্ছে না। এরফলে গত দুই বছরে কমে গেছে ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদ। এর ফলে ৮২ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন কমে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় এ তথ্য দিয়েছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে খাদ্যনিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বোরো চাষে নিরুৎসাহী হয়ে অন্য ফসলের আবাদে ঝুঁকছেন তারা। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বোরো চাষের কারণে এ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় সরকারি সিদ্ধান্তে বোরো চাষের পরিবর্তে পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষে কৃষকদের উৎসাহী করা হচ্ছে। ফলে বোরো চাষ কমে যাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০১৫ সালে বোরো চাষ মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলায় বোরো আবাদ হয়েছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ২৮৩ হেক্টর জমিতে। গত বছর তা কমে দাঁড়ায় ৫ লাখ ১১ হাজার ৬৮৬ হেক্টরে। আর চলতি মৌসুমে চাষ করা হয়েছে ৫ লাখ ২ হাজার ২৮৩ হেক্টর জমিতে। পক্ষান্তরে ২০১৫ সালে ওই পাঁচ জেলায় আলু আবাদ হয়েছিল ৯০ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪ হাজার ১৬০ হেক্টরে। আর চলতি মৌসুমে চাষ করা হয়েছে ১ লাখ ৬১২ হেক্টর জমিতে। ২০১৫ সালে ভুট্টা আবাদ হয়েছিল ৬৫ হাজার ২০০ হেক্টরে। গত বছর ৬৮ হাজার ১৬০ হেক্টরে এবং চলতি বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়ে ৭৬ হাজার ৪২৪ হেক্টরে। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের চেংমারী গ্রামের কৃষক আতিয়ার রহমান জানান, গত বছর ৬ একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করি। একমণ ধানে উৎপাদন খরচ পড়ছিল ৮০০ টাকা। সেই ধান বেচাইছি ৫০০-৬০০ টাকা। আগের বছরও বোরো আবাদ করি অনেক টাকা লোকসান খাইছি। এ বছর ২ একর জমিতে বোরো নাগাইচি। বাকি জমিত আলু আর ভুট্টা আবাদ করছি। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নের কলাবাড়ি গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান মাস্টার বলেন, ধান আবাদ করে বিক্রি করতে গেলে উৎপাদন খরচ ওঠে না। গত বছর এক মণ ধান বিক্রি করে একজন শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করা যায় নাই। ছয় একর জমির মধ্যে এ বছর চার একর জমিতেই বোরো ধান চাষের পরিবর্তে ভুট্টা আবাদ করেছি। একই চিত্র নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলাতেও।  বাংলাদেশ কৃষক সমিতি রংপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল জানান, ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে প্রকৃত কৃষক সরকারের ধার্য করা ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ আলম বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষে কৃষকদের উৎসাহী করা হচ্ছে। তবে এখনো এ অঞ্চলে চাহিদার তুলনায় বেশি বোরো ধান উৎপাদন হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর