মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফেরত যাচ্ছে কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা

ইউএনও-চেয়ারম্যানদের রশি টানাটানি

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ার খোকসায় অতি দরিদ্রদের কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ না করেই বিলের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) চাপ দিচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যানরা। আর কাজ ছাড়া বিল দিতে নারাজ ইউএনও। ইউএনও-চেয়ারম্যানদের এই রশি টানাটানির ফলে ফেরত যাচ্ছে প্রকল্পের টাকা। বঞ্চিত হচ্ছেন হতদরিদ্র মানুষ। খোকসার ইউএনও সেলিনা বানু বলেন, ‘কোনো কাজ হয়নি। চেয়ারম্যানরা ভুয়া বিল দাখিল করে সই করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এভাবে তো সরকারি বিল দিতে পারি না। প্রকল্পের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’ জানা যায়, চলতি বছর খোকসা উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পে ১২টি কাজের বিপরীতে ১৯২ জন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার কথা। এ জন্য বরাদ্দ করা হয় প্রায় ১৬ লাখ টাকা। প্রতিটি শ্রমিক সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাজ করে হাজিরা পাবেন ২০০ টাকা। গত মাসে চেয়ারম্যানদের কাছে প্রকল্প চাওয়া হয়। এ জন্য সভা ডাকা হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন সভায় এলেও বেশিরভাগ চেয়ারম্যান প্রকল্প জমা দেননি। এ ছাড়া সুবিধা ভোগীদের জন্য ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হলে সেটাও দেননি বেশির ভাগ চেয়ারম্যান। উপজেলা পিআইও অফিস সূত্র জানায়, খোকসা, ওসমানপুর, বেতবাড়িয়া, জানিপুর, শিমুলিয়া, শোমসপুর, গোপগ্রাম, জয়ন্তীহাজরা ও আমবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যানরা সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে কোনো প্রকল্পের অনুমোদন নেননি। উল্টো তারা সব পুরাতন কাজকেই নতুন দেখিয়ে তিন সপ্তাহের কাজের বিল (শ্রমিকদের মজুরি) জমা দেন উপজেলায়। ইউএনও প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন সব ভুয়া। পুরাতন প্রকল্পে দু-এক ঝুড়ি মাটি ফেলে কাজ দেখানো হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব প্রকল্পে ২৮ জন শ্রমিক কাজ করার কথা সেখানে মাত্র ৫-৬ জন কাজ করছেন। এসব শ্রমিকের ব্যাংক হিসাবও খোলা হয়নি। শিমুলিয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর ব্রিজের মাটি ভরাট প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে কোনো শ্রমিক নেই। পূর্ব পাড়ে সামান্য মাটি ফেলা। স্থানীয় প্রবাস সাহা জানান, এখানে মাত্র ছয় দিন মাটি ফেলা হয়েছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরের আগেই সবাই বাড়ি চলে যেত। ১৪ জনের পরিবর্তে কাজ করতেন ৮-৯ জন। এ ছাড়া সোমসপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তবাড়িয়া রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রকল্প জমা দেওয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি। কিছু মাটি তুলে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। একইভাবে নয়টি ইউনিয়নের ১১টি প্রকল্পে কাজ না করেই ভুয়া বিল দাখিল করেন চেয়ারম্যানরা। শিমুলিয়ার চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ খান বলেন, ‘পিআইও কাজ শুরু করতে বলেছিলেন, তাই করেছিলাম। ছয় দিন কাজ করেছে শ্রমিকরা। বিল জমা দিলেও টাকা পাইনি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার দাপট দেখিয়ে চেয়ারম্যানরা কোনো প্রকল্পে কাজ করেননি। এতদিন এভাবে চলে আসছিল। নতুন ইউএনও ধরে বসায় চেয়ারম্যানরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর