শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বুড়িমারীতে দুই কি.মি. রেলপথ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

যে লাইনের ওপর দিয়ে একসময় বাংলাদেশ ও ভারতে ট্রেন চলত সে রেললাইনের প্রায় দুই কিলোমিটার দখল করে নিয়েছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকটি আমদানি-রপ্তানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। রেলপথটি দখল করে ও লাইন তুলে ফেলে স্থাপনা নির্মাণ করছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। রেলওয়ে দফতর থেকে কোনো অনুমতি না নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) নাজমুল ইসলাম।

তবে ডিআরএমের কথা সঠিক নয় দাবি করে ম্যাক্সের স্থানীয় ম্যানেজার শিপু প্রসাদ দে জানান, তাদের দখলে থাকা অংশটুকু রেলওয়ের এস্টেট বিভাগের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছে। এরপর সেখানে অফিসে যাতায়াতের জন্য রাস্তাসহ প্রধান ফটক নির্মাণ করা হয়েছে।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর রেলস্টেশন থেকে বুড়িমারী জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রেলপথ। এরই মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি দখল করে প্রভাবশালীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বুড়িমারীতে রেলপথ দখলের ঘটনাটি জেনেও নির্বিকার পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় প্রকৌশল ও ভূমি (এস্টেট) বিভাগ।

অভিযোগ উঠেছে, লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বিশেষ রফায় মৌখিকভাবে বুড়িমারী থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কোটি টাকার এ রাষ্ট্রীয় সম্পদ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে ইজারা দিয়েছেন। অথচ কয়েক বছর আগেও এ রেলপথ দিয়ে মালামাল পরিবহনের জন্য রেলওয়ে ওয়াগন রাখা হতো। এখানে আমদানি করা পণ্য লোড-আনলোড করা হতো। রেলপথ দখলদারদের কাছে ইজারা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনো কথা না বলে প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার যোগদানের আগে ২০০৯ সালের দিকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলপথ এবং ভবন সংস্কারের কাজ করেছে ম্যাক্স। ২০১৫ সালের পর কোনো রেললাইন দখল হয়নি।’ ২০১৬ সালের মাঝামাঝি প্রায় দুই কিলোমিটার রেলপথ দখল করা হয়েছে, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি। রেলপথ দখলের ব্যাপারে জানতে চাইলে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের বুড়িমারীর দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার শিপু প্রসাদ দে বলেন, ‘আমরা রেললাইন তুলিনি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষই রেললাইন তুলেছে।’

বুড়িমারী রেলস্টেশন মাস্টারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা পাটগ্রাম স্টেশন মাস্টার মোকছেদ আলী বলেন, ‘বুড়িমারী রেলস্টেশনের আশপাশের ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় এবং স্টেশন থেকে বুড়িমারী জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত রেলপথ দখলের বিষয়টি বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারকে (ডিআরএম) জানানো হয়েছে।’

এসব প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও রেলপথটি দখলে রাখতে পারছেন না স্বীকার করে ডিআরএম নাজমুল ইসলাম বলেন, বুড়িমারী রেলস্টেশনের চারদিকে পাথর ক্রাশিং বসিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশই নষ্ট করছে না, তারা রেলের শতকোটি টাকা মূল্যের স্থাপনার সৌন্দর্য নষ্টসহ যাত্রীদের আসা-যাওয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর