বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

ডুবেই চলেছে হাওর ভেঙেছে আরও বাঁধ

প্রতিদিন ডেস্ক

বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে একের পর এক ডুবেই চলেছে হাওর এলাকার ফসল। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙেছে এবং আরও কয়েকটি হুমকির মুখে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে একের পর এক ডুবছে হাওর। আবাদকৃত ফসলের দুই-তৃতীয়াংশই এখন পানির নিচে। বছরের একটি মাত্র ফসল হারিয়ে কৃষকরা যখন দিশাহারা ঠিক তখন স্থানীয়ভাবে চালের বাজারে আগুন লেগেছে। বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় অধিক লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা মজুদ রেখে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ভাদেরটেক গ্রামের কৃষক আবদুল কাদের গতকাল জানান, ১৫ দিন আগে মোটা চাল যেখানে ৩৫ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হতো, সেখানে এখন ওই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। গতকাল পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চালের দাম সহনীয় মাত্রায় রাখার দাবি করেছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ুব বখত জগলুল। সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে ডাকা অপর এক সমাবেশে পর্যাপ্ত চাল সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সুনামগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেছেন, সুনামগঞ্জে খাদ্য সহায়তা প্রদানের বিষয় নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে। না হলে এই অঞ্চলের মানুষে ভয়াবহ খাদ্য সংকটে পড়তে হবে। নেত্রকোনা : গতকাল পর্যন্ত খালিয়াজুরীর আরও ৮টি বাঁধ ভেঙে হাওরে ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়েছে। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, সন্ধ্যা পর্যন্ত হাওরের ২৫ হাজার হেক্টর এবং জেলার মোট ২৯ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানায়, এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের হাওরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়ি ঢল আর প্রবল বর্ষণের কারণে প্রতিদিনই বাড়ছে পানি। সেই সঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ১৯ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি উপজেলা পরিদর্শন করেছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি করেন। হবিগঞ্জ :  হবিগঞ্জের ৫টি উপজেলার সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। কুশিয়ারা ও মেঘনা নদীর বাঁধ ভেঙে ও উপচে হাওরে পানি প্রবেশ করায় এসব এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ডিডি ফজলুর রহমান জানান, হবিগঞ্জ জেলার ১ লাখ ১৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছিল। তার মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। মৌলভীবাজার : হাওরের সর্বত্র থৈ থৈ করছে পানি আর পানি। কৃষকদের অতি কষ্টে ফলানো ধানের ওপর দিয়ে চলছে নৌকা। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার কাঞ্জার হাওর, মানিক হাওর, হাইল হাওর ও কাউয়াদিঘি হাওরের ৬২২ হেক্টর, শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরে ৩০৭ হেক্টর, রাজনগর উপজেলার সোনাদিঘি, কাউয়াদিঘি ও সিঙ্গাহুরা হাওরে ১৩৬৬ হেক্টর, কমলগঞ্জ উপজেলার কেওলার হাওরে ৩০০ হেক্টর, কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি, ডলডল, রফিনগর, খাদিমপাড়া, আলিয়ার, বহিষমারা বলি, মেঘাবিল, হাওর বিল, কালাপানির বিল, পালের বিল, হাগুয়া বিল ও লাউয়ার বিলসহ অন্যান্য বিলের ৪৫০০ হেক্টর, বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি, মালাম বিল ও হুয়ালা বলির ৩৪১৫ হেক্টর, জুড়ী উপজেলা হাকালুকি ও কইরকোনা বিলের ৪৬৫০ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর