বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

আগাম বন্যায় ফসল হারিয়ে দুশ্চিন্তায় হাওরের কৃষক

ঘরে ধান না ওঠা পর্যন্ত খাওয়ার ব্যবস্থা করব : ত্রাণমন্ত্রী

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার পশ্চিমপাড় পুরাতন হাটি গ্রামের কৃষক পলাশ মিয়া এবার ১৬ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। আগাম বন্যায় অনেকের মতো তারও সব ফসল তলিয়ে গেছে। কোনো রকমে আধা পাকা প্রায় তিন একর জমির ধান কেটে আনতে পেরেছেন তিনি। এ ধানে অল্প কদিন চলবে পরিবারের সদস্যদের খোরাক। সারা বছর কিভাবে চলবেন সে চিন্তায় তার ঘুম নেই। তার ওপর রয়েছে মহাজনি ঋণ। বোরো আবাদ করতে চড়া সুদে তিন লাখ টাকা ঋণ করেছিলেন তিনি। পলাশের মতো অবস্থা একই গ্রামের সাদির মিয়া, আলম, আব্দুল আহাদ, লাল মিয়া, মানিক মিয়া, আব্দুল হাকিম, আব্দুল গণি, ফজলু মিয়াসহ অনেক কৃষকের। তাদের কেউ ব্যাংক থেকে, কেউ বিভিন্ন এনজিও এবং মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। এনজিওর কিস্তি পরিশোধ এবং মহাজনি ঋণের তাগাদায় তারা অতিষ্ঠ। আগাম বন্যায় ফসল হারিয়ে কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের কৃষক এখন ঋণ পরিশোধের দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। মাত্র কদিন পরই ফসল কাটার কথা ছিল। কিন্তু বন্যায় সব তলিয়ে বহু কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। একদিকে সংসার চালানোর খরচ যোগানো, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধ করা। এমন ভাবনায় দিন কাটছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের। ফসল হারানোর শোক কাটিয়ে না উঠতেই কৃষকের সামনে এখন ঋণ পরিশোধের দুশ্চিন্তা ঘূরপাক খাচ্ছে। ঋণ পরিশোধে কেউ হালের গরু এমনকি বসতঘর পর্যন্ত বিক্রির কথা ভাবছেন। সব হারিয়ে কোনো কোনো কৃষক কাজের সন্ধানে পূর্বপুরুষের ভিটা ছাড়ার কথাও চিন্তা করছেন। আগাম বন্যায় এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে জেলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ঋণ মওকুফ এবং পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন। এ দাবিতে তারা সোমবার শহরে মানববন্ধন করেছেন। জেলা প্রশাসক আজিমুদ্দিন বিশ্বাস হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন। এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া গতকাল বিকালে কিশোরগঞ্জের বন্যাকবলিত হাওর অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। তিনি হাওরের মিঠামইন ও ইটনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল, কিশোরগঞ্জের ডিসি আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, এসপি আনোয়ার হোসেন খান। মন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের কষ্ট যতদিন পর্যন্ত লাঘব না হবে, আপনাদের ঘরে যতক্ষণ আবার ধান না উঠবে, ততক্ষণ আমরা আপনাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করবো।

সর্বশেষ খবর