বুধবার, ১৭ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

চরনিজামে ৭ হাজার মানুষের নির্বাসিত জীবন

ভোলা প্রতিনিধি

দ্বীপজেলা ভোলার বিচ্ছিন্ন এক উপ-দ্বীপ চরনিজাম। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা দুর্গম ওই চরে সাত হাজার মানুষ এক প্রকার দ্বীপান্তরে বন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। জরুরি প্রয়োজনেও তারা শনি বা মঙ্গলবার ছাড়া অন্য কোনো দিন ওই দ্বীপচর থেকে বের হতে পারেন না। এমনকি মেঘনা নদীর মোহনা পাড়ি দিয়ে নিজ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আবার চরে ফিরে আসতেও তাদের দুই দিন লাগে। এই বন্দিদশা থেকে মুক্তির জন্য দ্বীপটিকে আলাদা ইউনিয়ন কিংবা নিকটবর্তী চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের সঙ্গে সংযুক্ত করার দাবি এলাকাবাসীর। মনপুরা উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড চরনিজাম। প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে সাত হাজার মানুষের বসবাস। বর্ষায় ইলিশ মৌসুমে জনসংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এসব মানুষ ইচ্ছা করলেই তারা দ্বীপ ছেড়ে কোথাও যাতায়াত করতে পারেন না। নৌ-যান তাদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হলেও তারা সে সুযোগও সব সময় পান না। চরনিজাম থেকে উপজেলা শহর মনপুরা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় উত্তর সাকুচিয়ায় যাতায়াতের জন্য সপ্তাহে দু’দিন একটি খেয়া নৌকা চলাচল করে। উপজেলা পরিষদ থেকে একমাত্র ওই খেয়াটিকে অনুমতি দেওয়ায় অন্য মাঝিরাও আলাদা খেয়া চালু করতে পারছে না। তাই খেয়ামাঝির কাছে চরবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছে। কারণ মাঝি ইচ্ছামাফিক খেয়া নৌকা চালায়। ভুক্তভোগীরা জানান, চরনিজাম থেকে তাদের নিজ ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হলে টানা ২ ঘণ্টা ট্রলার চালিয়ে মেঘনার মোহনা পাড়ি দিয়ে প্রথমে চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়াঘাটে এবং সেখান থেকে আবার ২ ঘণ্টার পথ মেঘনার মোহনা পাড়ি দিয়ে মনপুরা উপজেলার উত্তর সাকুচিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হয়। তাও প্রতিদিন সম্ভব হয় না। খেয়া নৌকাটি সপ্তাহে দুই দিন যাতায়াত করে। শনিবার গিয়ে রবিবার ফিরে আসে। আবার মঙ্গলবার গিয়ে বুধবারে ফিরে আসে। এই দুই দিন ছাড়া অন্য কোনো দিন চরনিজাম থেকে যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্ষা মৌসুমের অধিকাংশ সময় বৈরী আবহাওয়ায় ট্রলার চলাচল করতে পারে না। ফলে দ্বীপবাসীকে এক ধরনের বন্দী জীবন যাপন করতে হয়। চরনিজামে আট থেকে দশ কিলোমিটার দীর্ঘ কালকিনি সমুদ্র সৈকত থাকলেও যোগাযোগ সমস্যার কারণে পর্যটকরা সেখানে যেতে পারছেন না। এছাড়া সেখানকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের সেবা কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, সরকার যদি এই উপ-দ্বীপটিকে আলাদা একটি ইউনিয়ন অথবা পার্শ্ববতী ঢালচর ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত করে তাহলে তাদের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হয়। কারণ ওই চর থেকে ঢালচরে যেতে ইঞ্জিন নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগে। ভোলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মাহমুদুর রহমান জানান, জনগণ চাইলে তাদের এই দাবি বাস্তবায়ন সম্ভব।

সর্বশেষ খবর