শনিবার, ৩ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্বীকৃতি মিললেও ভাতা মেলেনি

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

স্বীকৃতি মিললেও ভাতা মেলেনি

৭১-এ নির্যাতনের শিকার নারী রাহেলা বেগম। বিয়ের মাত্র দেড় বছর পর ৭১’র এক সকালে নিজ বাড়ি শহরের সয়াধানগড়া শ্বশুর বাড়ি থেকে পালানোর পথে রায়গঞ্জ উপজেলার ঘুড়কা গ্রামে তার জীবনে নেমে আসে পাক-বাহিনীর বর্বর নির্যাতন। হানাদাররা লুটে নেয় তারসহ আরও দুই হিন্দু মেয়ের সম্ভ্রম। দেশ স্বাধীন হওয়ার একমাস পর বাড়ি ফিরলে স্বামী আকবর আলী তাকে মেনে নেননি। আশ্রয় নেন বঙ্গবন্ধুর নারী পুনর্বাসন কেন্দে । দেড় বছর পর স্থানীয় মাতব্বরের সহায়তায় স্বামীর ঘরে ফিরে যান। প্রায় ১৫ বছর আগে পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রেখে স্বামী মারা যান। তারপর থেকে ছোট মেয়েদের নিয়ে রাস্তার ধারে পিঠা বিক্রি করে শুরু করেন বেঁচে থাকার যুদ্ধ। প্রায় ১০ বছর আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে তার নির্যাতনের সাক্ষাতকার প্রচার হয়। আর সে কথা শুনেই ‘খারাপ’ আখ্যা দিয়ে জামাতা এক মেয়েকে তালাক দেয়। মেয়েটির ঘরে একটি সন্তান রয়েছে। বয়োবৃদ্ধ রাহেলার শরীরে বেঁধেছে নানা রোগ। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তার মতো একই অবস্থা পাকবাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হাজেরা, করিমন, নূরজাহান, আয়েশা বেগমের। জানা যায়, ৭১’র পাক বাহিনীর নির্যাতিতাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। মহাজোট সরকার তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ অবস্থায় প্রথম ধাপে ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ১৩ জন বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি পান। এর পর থেকেই তাদের ভাতা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে ২০১৫ সালে ২ জন এবং ২০১৬ সালের ২১ জুলাই ৫ জন স্বীকৃতি পান। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কপালে ভাতা জোটেনি। ইতোমধ্যে দুজন মারা গেছে। বীরাঙ্গনা নুরজাহান বলেন, আগে বিভিন্ন মেসে মেসে থালা-বাসন মেঝে দিতাম। তা থেকে যা পেতাম তাই দিয়ে চলতাম। এখন চোখে দেখি না। কেউ কাজে নেয় না। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। বীরমাতা হাজেরা বেগম জানান, ঘর-বাড়ি নেই। রেললাইনের ধারে ঝুপড়ি ঘরে থাকি। আয়েশা বেগম জানান, আগে সুতার মিলে কাজ করতাম। বয়স হয়েছে চোখে দেখি না। তাই কেউ কাজে নেয় না। একই অবস্থা বীরমাতা করিমন বেগমের।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আলাউদ্দিন জানান, প্রথম ধাপে পাওয়া ১৩ জনের ভাতা নিয়মিতই দেওয়া হচ্ছে। তবে পরের ২ বারে গেজেটে সিরাজগঞ্জের সাতজনের নাম থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অর্থ মঞ্জুরীর বরাদ্দপত্র না থাকায় তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা  নেওয়া যাচ্ছে না। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিলেও তাদের ভাতা প্রদানে কোনো বাধা থাকবে না।

সর্বশেষ খবর