শনিবার, ১০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

আবাদি জমি, আবাসিকে ইটভাটা পুড়ছে ফসল নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটভাটা। বাদ যাচ্ছে না আবাদি জমি, আবাসিক এলাকাও। ভাটার ধোয়া ও তাপে পুড়ছে আশপাশের জমির ফসল-গাছপালা। বিষাক্ত হয়ে উঠছে পরিবেশ। প্রশাসন বলছে, অনুমোদনহীন ভাটার তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাধারণ মানুষ পরিবেশ বাঁচাতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। জানা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলায় ইটভাটার সংখ্যা শতাধিক। শুধু রায়গঞ্জ উপজেলাই রয়েছে ৪০টি। অধিকাংশ ভাটা গড়ে উঠেছে ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকায়। এ সব ইটভাটার প্রায় ৮০টির নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। অবৈধ ভাটার কারণে পুড়ছে ফসল, গাছের ফল-ফুল। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। রায়গঞ্জের আবু দিয়া গ্রামে এক সারিতে ফসলি জমিতে রয়েছে পাঁচটি ভাটা। একটু দূরেই চাঁদপুর রাস্তার ধারে গড়ে উঠেছে আরেকটি বিশাল ইটভাটা। যার চারপাশে আবাসিক এলাকা। এ ভাটার কারণে ওই এলাকার মানুষ পড়েছেন নানা সমস্যায়। মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। এছাড়া শ্যামনাই, চকচণ্ডি, ভুইয়াগাতী, মোজাফফরপুর ও পাঙ্গাসীতে প্রভাব খাটিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অনুমোদনহীন বেশকিছু ভাটা। অভিযোগ রয়েছে, জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা প্রতি ভাটা থেকে মাসোহারা নিয়ে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন। এমনকি সাংবাদিকের নাম ভাঙিয়েও তিনি বছরে লাখ লাখ টাকা হাতাচ্ছেন। এ ব্যাপারে গোলাম মোস্তফা জানান, যারা নতুন ভাটা করছে তাদের আগে কাগজপত্র তৈরি করতে বলা হচ্ছে। কেউ কথা শুনছে না। মাসোহারার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রোগ্রামে প্রশাসনকে কিছু দিতে হয়। যা প্রকাশ্যে বলা যায় না।’

রায়গঞ্জের বিলচণ্ডি গ্রামের আব্বাস আলী জানান, যেভাবে ভাটা গড়ে ওঠছে তাতে করে কয়েক বছর পর ভাটার আশপাশের এলাকায় আর ফসলি জমি থাকবে না। একই গ্রামের রহিম জানান, ভাটার ধোয়ার কারণে গাছে ফল-ফুল কমে যাচ্ছে। শাহজাদপুরের তালগাছি গ্রামের কৃষক আতাব, মান্নান, গাড়াদহ দক্ষিণপাড়ার লতিফ, আমিনুল ও সৈয়দ আলী জানান, গরম ধোয়ায় তাদের প্রায় এক হাজার বিঘার জমির ধান পুড়ে গেছে। সদর উপজেলার বহুতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, স্কুলের পাশে ভাটা গড়ে ওঠায় শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম লিটন জানান, জেলায় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৫-২০টির বৈধ কাগজপত্র আছে। সমিতির পক্ষ থেকে বার বার কাগজপত্র তৈরির জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা বলেন, ‘রাস্তায় বের হলেই দুই ধারে শুধু ইটভাটা দেখতে পাই।’ তিনি জানান, বৈধ ও অবৈধ ভাটার তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর