রবিবার, ২৫ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

কালিয়া ও মধুখালী পুরুষশূন্য ১৮০ পরিবারে নেই ঈদ

নড়াইল ও ফরিদপুর প্রতিনিধি

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী গ্রামে ইউপি নির্বাচনী সহিংসতার জেরে তিন বংশের প্রায় দেড়শ’ পরিবারের পুরুষ সদস্যরা এক মাস ধরে বাড়িছাড়া। শিশু ও নারীরা বাড়িতে থাকলেও আছেন আতঙ্কে। এ সব পরিবারে নেই ঈদ আনন্দ। কেনা হয়নি নতুন পোশাক। আয়োজন নেই ভাল খাবারের।

এলাকাবাসী জানান, গত ২৩ মে অনুষ্ঠিত পেড়লী ইউপি নির্বাচনের দুই দিন পর আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে কালিয়া আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোফাজ্জেল হোসেন (৫০) নিহত হন। মোফাজ্জেল চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী বিদ্রোহী (আ.লীগ) প্রার্থী জারজিদ মোল্যার সমর্থক ছিলেন। মোফাজ্জেল হত্যার পর পেড়লী গ্রামে প্রতিপক্ষের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই সংঘর্ষে আহত বদরুল ইসলাম (৫১) মারা যান ২৭ মে। বদরুল নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন ইকবালের সমর্থক ও পেড়লী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। নিহত দুই নেতার বাড়িই পেড়লী গ্রামে। ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থক ১৫০ পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাড়িছারা। প্রায় এক মাস পর শুক্রবার ওই গ্রামে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর দেখা যায়। এতোদিনেও স্বাভাবিক হতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্তরা। ফিরতে পারছেন না বাড়িতে। ভুক্তভোগী রোজি বেগম বলেন, ‘প্রতিপক্ষের লোকজন প্রায়ই বাড়িতে এসে মহিলাদের মারধর করছে। বাড়ি থেকে তাড়াতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সাফায়েত জানায়, প্রতিপক্ষের ভয়ে তার বাবা বাড়িতে থাকতে না পারায় ঘরে ঈদের আনন্দ নেই। রেজাউল মোল্যার স্ত্রী হেমেলা বলেন, ‘সেমাই ও চিনি কেনার টাকাও নেই; ধানসহ সব লুট করে নিয়ে গেছে মোফাজ্জেলের সমর্থকরা। স্বামী ও দুই ছেলে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আমি এখন পরের বাড়ি খাই।’ একই অভিযোগ করেন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিমলা, রেবেকা, সাকিরাসহ অনেকে। পেড়লী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এটিএম তসরিফুজ্জামান বলেন, পেড়লী এলাকায় পুরুষেরা বাড়িঘর ছাড়া কিনা তার জানা নেই। আসামিরা পুলিশের ভয়ে পালিয়ে থাকতে পারে। এদিকে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কোড়কদী ইউনিয়নের চর-বাশপুর গ্রামের ৩০ পরিবারের শতাধিক সদস্য এবার ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত। গত ১৬ জুন কোড়কদী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মুকুল হোসেন ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আহম্মদ আলী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর জেরে চেয়ারম্যান মুকুলের লোকজন আহম্মদ আলীর পক্ষের ৩০টি ঘরে ভাঙচুর, লুটপাট চালায়। চেয়ারম্যানের ভয়ে ও মামলা থাকায় ওই ৩০ পরিবারের পুরুষ সদস্যরা পলাতক। ঘরবাড়ি ভাঙচুর করায় মহিলা-শিশুরা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মিনা, আসমা, নুরজাহান, ছবি, বালী বেগম জানান, চেয়ারম্যান মুকুলের লোকজন তাদের প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। সন্তানরা ঈদের আনন্দ করতে পারছে না। মধুখালীর ওসি রুহুল আমিন জানান, ওই ঘটনায় উভয় পক্ষ মামলা করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার যাতে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে। ইউএনও লুত্ফুন নাহার জানান, উভয় পক্ষকে ডেকেছি। কোনো পক্ষই আসেনি। চেয়ারম্যানকে বললে তিনি ঢাকায় আছেন বলে জানান।

সর্বশেষ খবর