বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

চালকলের ছাইয়ে পাঁচ গ্রামের পরিবেশ বিপর্যয়

ভুক্তভোগী কয়েক হাজার মানুষ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

‘হয় সরকার আমাদের ছাইয়ের হাত থেকে রইক্ষে করুক, না হলি অন্য জায়গায় বাড়ি কইরে দিক। আমরা আর এই ভাবে এই গাঁয়ে থাকতি পারছিনি।’ ক্ষোভের সঙ্গে এ কথা বলেন বল্লভপুর গ্রামের গৃহবধূ আছিয়া বেগম। শুধু আছিয়া নয়, এমন ক্ষোভ আর উত্কণ্ঠা ঝরছে চালকলের ছাইয়ে বিপর্যস্ত কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খাজানগর, বল্লভপুর, পোড়াদহ, কবুরহাট ও আইলচারবাসীর। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকায় চালকলে সৃষ্ট ছাইয়ে ডেকে এনেছে বিপর্যয়। ৫-৬টি গ্রামের মানুষের সেখানে বসবাস করা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি খেতের ফসল ও গাছপালার ক্ষতি করছে ছাই। ভুক্তভোগিরা পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে চালকল মালিকদের বার বার অনুরোধ করেও ফল পাননি। জানা যায়, খাজানগরে ছোট-বড় পাঁচ শতাধিক চালকল ও দেড় হাজার চাতাল রয়েছে। প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার মণ ধান সিদ্ধ হয়, যার জালানি চালকলের তুষ। এর থেকে সৃষ্ট ছাই কারখানার আশেপাশে খোলা জায়গায় আবার কোথাও সড়কের পাশে রাখা হয়। যা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে আসপাশের গ্রামে। পাশাপাশি বয়লারের চিমনি দিয়ে বের হওয়া ছাই ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। খাজানগরসহ আশপাশের গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ঘরের চাল, গাছপালা, ধানের বিছালির গাদা—সবখানে ছাই আর ছাই। বল্লভপুরের বাসিন্দা আবজাল শেখ জানান, ঘরে খেতে বসলে থালায় ছাই উড়ে এসে পড়ে। কাপড়-চোপড় ধুইয়ে রোদে শুকাতে দিলে ছাই পড়ে আবার নোংরা হয়ে যায়। একই এলাকার কছিরন বেওয়া বলেন, ছাইয়ের কারণে মাত্র পাঁচ বছর আগে তার ঘরে লাগানো টিন ফুটো হয়ে গেছে। কবুরহাটের শরিফুল ইসলাম বলেন, শুধু জনজীবনই নয় চালকলের ছাই প্রভাব ফেলছে খেতের ফসল-গাছপালার ওপর। বিশেষ করে আম, লিচুর মুকুল নষ্ট করে দেয়। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষক ও পরিবেশবিদ লাল মহাম্মদ বলেন, ‘ছাইয়ে কার্বনসহ বেশকিছু উপাদান রয়েছে। যা চোখে ঢুকলে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। এছাড়া ছাই থেকে মানুষের নানা রোগ হতে পারে।’ খাজানগর মোকামের চালকল মালিক ওমর ফারুক জানান, মালিকরা চাইলেই চালকলগুলো পরিবেশ বান্ধব করে গড়ে তোলা সম্ভব। এর জন্য বেশি খরচাও হবে না। আমি কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় আমার মিল থেকে এখন আর তেমন ছাই ওড়ে না।’ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি সুরাহা করতে শিঘ্রই মিল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

সর্বশেষ খবর