বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

দালালরাই নিয়ন্ত্রক!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বক্ষব্যাধি ক্লিনিক

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

দালালদের দখলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক। তাদের কথামতো চলতে হয় চিকিৎসক ও স্টাফদের। ক্লিনিকে রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ পেলেও রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে বাইরে। বছরের পর বছর ধরে চলছে এই অবস্থা। অভিযোগ আছে পার্শ্ববর্তী আইডিয়াল প্যাথলজি অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে। বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের ভিতরে সার্বক্ষণিক বিচরণ ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারীদের।

জানা যায়, ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ডাক্তারের কক্ষ থেকে রোগী বের হলেই তাদের পাঠানো হচ্ছে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি টাকায়। ক্লিনিকের কিছু কর্মচারীও সহায়তা করছেন এ কাজে। ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির মালিক মশিউর রহমান লিটন জেলা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলেও জানা গেছে। সে কারণে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন। স্থানীয় এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এ অভিযোগের দলীয় তদন্ত করান। তদন্ত রিপোর্ট এমপি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন। ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর রিপোর্ট দেওয়া হলেও আজও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।

তদন্ত কমিটির কাছে মুখ খোলায় বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের রেডিওলজিস্ট গোকুল চন্দ্রকে অন্যত্র বদলি করা হয়। গোকুল কমিটির কাছে বলেছিলেন, প্রতিদিন তারা ৪-৫টির বেশি এক্সরে করতে পারেন না। বেশি এক্সরে করতে চাইলে বাধা ও নানা হুমকি দেওয়া হয়। তিনি ছাড়াও তদন্ত কমিটির কাছে ক্লিনিকের ডাক্তার গোলাম মোস্তফা, প্যাথলজিস্ট বিজয় কুমার, ল্যাব সহকারী মো. জহির, অফিস সহায়ক আল মাহমুদ, ওয়ার্ড বয় শরীফ উদ্দিন তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তারা সবাই ক্লিনিকটিতে দালালের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ করেন। তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল বলেন, অভিযোগগুলো সত্য। এখানে গরীব রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মশিউর রহমান লিটন জানান, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে এর একটিও সত্য নয়’।

সরজেমিনে ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, ডাক্তার দেখানোর টিকিট দেওয়ার কাজ করছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজন। ক্লিনিকের উল্টোপাশেই আইডিয়াল প্যাথলজি অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ডাক্তারের কক্ষ থেকে রোগী বের হলেই তাকে সোজা ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হয়। ক্লিনিকে রক্তের সিবিসি পরীক্ষার মূল্য ১৫০ টাকা হলেও ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়া হচ্ছে ৪০০। আর-ই পরীক্ষায় ১০০ টাকার স্থলে ২৫০ এবং ইএসআর ৫০ টাকার স্থলে ৪৫০ টাকায় পরীক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের জুনিয়র কনসালটেন্ট জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ সব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর