রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

১৬ জেলায় বন্যা, পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী

প্রতিদিন ডেস্ক


১৬ জেলায় বন্যা, পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী

ঠাকুরগাঁওয়ে রেললাইনের উপর দিয়ে পানির স্রোত। ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় ও দিনাজপুর রেল চলাচল বন্ধ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির দেশের কয়েকটি এলাকায় আরও অবনতি হয়েছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা। এতে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে, ভেসে যাচ্ছে খামারের মাছ। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের খবর— রংপুর : তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলার ৬৮ গ্রামের ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কায় অনেক এলাকার মানুষ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমন ও সবজি খেত। ভেসে যাচ্ছে পুকুর-খামারের মাছ। নীলফামারী : বুধবার রাতে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে জেলা শহরের সওদাগড়পাড়া, বাবুপাড়া, প্রগতিপাড়া, নিউবাবুপাড়া, শাহীপাড়া, নতুন বাজার কলোনিসহ কয়েক এলাকার বাড়িঘর হাঁটুপানিতে তলিয়ে রয়েছে। শহরের অনেক রাস্তার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। কুড়িগ্রাম : ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমোর ও তিস্তাসহ কুড়িগ্রামের সব কটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ধরলার পানি কুড়িগ্রাম ফেরিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, গত ১২ ঘণ্টায় ধরলার সেতু পয়েন্টে পানি ৫৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের ২০০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৬৯টি স্কুল। গাইবান্ধা : তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। করতোয়ার পানি বৃদ্ধির ফলে গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কয়েকটি স্থানে মাটি সরে গেছে। পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী চন্দ্র শেখর জানান, করতোয়ার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কয়েকটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঠাকুরগাঁও : পাঁচ উপজেলার কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, ব্রিজ-কালভার্ট তলিয়ে গেছে। নষ্ট হচ্ছে ফসল। গবাদিপশুসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। টাঙ্গন নদের পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাট : ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল বিপদসীমার ৩০ এবং ধরলার পানি কুলাঘাট পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সদর উপজেলার মোগলহাটে পাউবোর দুটি বাঁধ ভেঙে ১৩ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধসে গেছে পাটগ্রাম শহররক্ষা বাঁধটিও। সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নিম্ন এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পঞ্চগড় : জেলা শহরসহ পাঁচ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। করতোয়া, মহানন্দা, ডাহুক, ভেরসাসহ সব কটি নদ-নদীর পানি বেড়ে নদীপাড়ের মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। বেশকিছু এলাকার মানুষ বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আশ্রয় নিয়েছে। দিনাজপুর : পুনর্ভবা ও আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। তলিয়ে গেছে নিচু এলাকা। খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নে ৯০০ বাড়িতে হাঁটুপানি জমেছে। নালিতাবাড়ী : শেরপুরের নালিতাবাড়ীর ৭ হাজার একর আমন খেত তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে পৌরসভাসহ ছয়টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা। ভোগাই নদীর হাতিপাগার, নয়াবিল, শিমুলতলা, খালভাংগা, নিজপাড়া এলাকা এবং চেল্লাখালি নদীর গোল্লাপাড়ে বাঁধের ১০ স্থান ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। ইতিমধ্যে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জ : বিভিন্ন উপজেলায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। সাত উপজেলার ২৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত করেছে শিক্ষা বিভাগ। গতকাল বিকালে শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমার পানি বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। হবিগঞ্জ : খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ২০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এজন্য গতকাল সকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : আখাউড়ার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। শুক্রবার সকাল থেকে স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যেতে থাকে। গতকাল রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। খাগড়াছড়ি : দীঘিনালা উপজেলার পাঁচটি গ্রাম ডুবে গেছে। মাইনি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। মেরুং বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল সওদাগর জানান, বন্যায় ১০০ দোকান পানির নিচে চলে গেছে। খুলনা : নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তলিয়ে গেছে শান্তিধাম মোড়, ফারাজিপাড়া রোড, শামসুর রহমান রোড, রয়্যালের মোড়, পিটিআই, নিরালা, বাগমারা, মিস্ত্রিপাড়া, শিববাড়ী, ডাকবাংলা, খানজাহান আলী রোডসহ বিভিন্ন এলাকা। বিশ্বনাথ : সিলেটে বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিয়া ও সুরমা নদীর দুই কূল ছাপিয়ে নদীপাড়ের গ্রাম ও ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করেছে। এরই মধ্যে ওইসব এলকার রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে অনেকের মাছের খামার।

সর্বশেষ খবর