শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

আশ্রয়ণ প্রকল্পে ‘নির্বাসিত’ জীবন

চার দিকে পানি, নেই কোনো সড়ক-সেতু

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

আশ্রয়ণ প্রকল্পে ‘নির্বাসিত’ জীবন

মায়ের কোলে সন্তান, বাবার পিঠে বইয়ের বোঝা— এভাবেই স্কুলে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজারপাট ডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্প। পঞ্চগড় শহর থেকে খুব দূর না হলেও অনেকটা নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন এই গুচ্ছগ্রামের প্রায় সাড়ে ৮০০ মানুষ। রাস্তা না থাকায় লোকালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বললেই চলে। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত এ প্রকল্পের বাসিন্দাদের বন্দী জীবনের মতোই বাস। ডাঙা আশ্রয়ণ প্রকল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি লোকমান আলী জানান, বহু অফিসে দরখাস্ত দিচ্ছি। কাম হয়নি। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু ওয়াদুদ বলেন, ‘ডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্পটি দ্বীপের মতো। এখানে ব্রিজ এবং রাস্তা নির্মাণের বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে’। ২০০১ সালে ভূমিহীন ৩০ মুক্তিযোদ্ধা এবং ১২০ হতদরিদ্র মানুষকে সাড়ে পাঁচ শতক করে খাস খতিয়ানের জমি বরাদ্দ দেওয়ার মাধ্যমে গড়ে উঠে ডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্প। আড়াই শতক জমির ওপর সরকারি খরচে একেকটি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। রয়েছে দুটি কমিউনিটি সেন্টার, প্রতি ১০ পরিবারের জন্য একটি টিউবওয়েল এবং পাঁচ পরিবারের জন্য একটি ল্যাট্রিন। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কিছু সুবিধা পেলেও রাস্তাঘাট না থাকায় তাদের জীবনযাত্রায় কোনো অগ্রগতি আসেনি। অসহায় এ সব ভূমিহীনের মাথা গোজার ঠাঁইটুকু হলেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে প্রায় ১৭ বছর ধরে তারা অনেকটা নির্বাসিত। রাস্তা এবং ব্রিজ নির্মাণের দাবি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দফতরে আবেদন করে শুধু আশ্বাসই মিলেছে। গুচ্ছ গ্রামটির পশ্চিম ও দক্ষিণে করোতোয়া এবং পূর্বে চাওয়াই নদী। উত্তর প্রান্তে একটি সরু আলের মতো রাস্তা থাকলেও সেটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। তাই চলাচলে বাধা দেন জমির মালিকরা। তিন দিকে বয়ে যাওয়া নদীতে ব্রিজ, রাস্তা না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে হাঁটুপানি ভেঙে লোকালয়ে পৌঁছা গেলেও বর্ষায় নদী পার হওয়ার কোনো উপায় থাকে না। ফলে এ সময় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা যেমন কষ্টকর হয়ে পড়ে তেমনি চিকিত্সাসেবা পাওয়াও দুষ্কর হয়। কখনো বাবা-মায়ের ঘাড়ে চেপে নদী পার হয় শিশু শিক্ষার্থীরা। আবার কেউ নদী পার হয়ে ভেজা কাপড় পাল্টে স্কুল-কলেজে যান। গুচ্ছ গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই শ্রমিক। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সময়মতো কাজেও যেতে পারেন না তারা। ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা বসিরউদ্দিন জানান, শুকনা মৌসুমে হাঁটুপানি পার হয়ে কাজে যেতে পারলেও বর্ষাকালে সম্ভব হয় না। সময়মতো যেতে পারি না বলে মহাজনরা কাজে নেয় না। খোদেজা বেগম জানান, চার কিলোমিটার দূরের একটি স্কুলে দুই মেয়ে পড়ে। দিনে তিনবার মেয়ে দুটিকে কলাত (কোলে) করে নদী পার করে দিবা (দিতে) হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর