শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিরাজগঞ্জে নিহত নয়জনের পরিবারে শোকের মাতম

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জে নিহত নয়জনের পরিবারে শোকের মাতম

টাঙ্গাইলের করটিয়ায় বৃহস্পতিবার বিকালে ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত নয়জনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়নের কাচিহারা গ্রামে। নয়জনের মধ্যে ছয়জন একই পরিবারের সদস্য। একসঙ্গে পরিবারের ছয়জনকে হারিয়ে স্বজনরা শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। আর যেন কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ না হারায় এ জন্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। পাশাপাশি গুরুতর আহতদের সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন তারা। নিহতদের স্বজনরা জানান, ছোটবেলায় মা-বাবা মারা যাওয়ায় সড়ক দুর্ঘনায় নিহত ওছিমুদ্দীন কাচিহারা গ্রামের আজাহার আলীর বাড়িতে জায়গীর থেকে লেখাপড়া শেষে ঢাকা বিজিপ্রেসে চাকরি নিয়ে আজহার আলীর বড় মেয়ে হাজেরা খাতুনকে বিয়ে করেন। বড় জামাই হওয়ার সুবাদে শ্বশুরের সংসারের সব দায়িত্ব নেন ওছিমুদ্দীন। ঈদের ছুটিতে ছেলেমেয়ে, জামাতা ও বিয়াইনকে নিয়ে আসেন শ্বশুর আজাহার আলীর বাড়িতে। ঈদ কাটিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে পরিবারের ১০ জনসহ প্রতিবেশী চারজনকে নিয়ে মাইক্রোবাসযোগে ঢাকায় রওনা দেন। বিকাল ৩টার দিকে টাঙ্গাইলের করটিয়ায় ঘাতক ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ওছিমুদ্দীন ও তার স্ত্রী হাজেরা, কলেজপড়ুয়া ছেলে শুভ, মেয়ে সোমা, মেয়ের শাশুড়ি মমতাজ, দেবর পাপন ও প্রতিবেশী তিনজন মারা যান। বাকিরা সবাই গুরুতর আহত হন। আহতরা সবাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একসঙ্গে পরিবারের সবাইকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে পরিবারের অন্য সদস্যরা। সকালে পাঁচজনের ও বিকালে ওছিমুদ্দীনের লাশ গ্রামে আসার পর দেখা দেয় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। দুদফায় এক সারিতে দাফন করা হয় ওছিমুদ্দিন,  তার স্ত্রী ও  তাদের একমাত্র ছেলেকে। মেয়ে ও মেয়ের শাশুড়ি ও দেবরকে কালিয়াকৈরে দাফন করা হয়। বাকিদের যার যার বাড়িতে দাফন করা হয়। সরেজমিন গেলে ওছিমুদ্দীনের শ্বশুর বয়োবৃদ্ধ আজাহার মণ্ডল আদরের মেয়ে-মেয়ের জামাই-নাতি ও নাতনিকে হারানোর কষ্টে বুক চাপড়ে বলেন, মেয়ে ও নাতি-নাতনিরা যাওয়ার সময় বলে গেল নানা ভালো থেকো। আমাদের ঢাকার বাসায় কয়েকদিন পর এসো। কিন্তু তাদের সঙ্গে আর দেখা হলো না। এ কষ্ট কীভাবে ভুলব? বোন রেনুকা ও সাবানা জানান, দুলাভাই আমাদের বাড়িতে লেখাপড়া করেছে। চাকরি পাওয়ার পর থেকে বোন হাজেরা ও দুলাভাই বাবা-মার সব দায়িত্ব নিয়েছিল। কিন্তু এখন বাবা-মাকে কে দেখবে? আর একমাত্র ভাগ্নি ঢাকায় গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন। চিকিৎসা ব্যয় বহন করার সামর্থ্য কারো নেই।

ওছিমুদ্দীনের শ্যালক জুয়েল ও এলাকাবাসী জানান, আমরা সব হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের মতো আর কোনো পরিবার যেন তাদের স্বজনদের এভাবে না হারায় এ জন্য সরকারের কাছে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যা যা করণীয় সব কার্যক্রমই যেন সরকার বাস্তবায়ন করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর