শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভাটার ধোঁয়ায় পুড়ছে জমির ফসল

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

‘ভাইজান আমাদের বাঁচান, এই জমির ফসল দিয়াই সংসার চলে। জমিতে এহন ফসল নাই, সব পুইড়্যা গ্যাছে। এইবার আমাদের সংসার চলবো ক্যামনে।’ কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামের কয়েক কৃষক। কেউ কেউ জমি থেকে ধানের গোছা তুলে দেখালেন সব পুড়ে গেছে। একটি ধানও হয়নি। শুধু ধান নয়, ভাটার কালো ধোঁয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে সবজি বাগানও। কয়েক মাস ধরে অম্বিকাপুরে চলছে এমন অবস্থা। ভাটা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও লাভ হয়নি।

কৃষকদের অভিযোগ, ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামের এসব জমিতেই ‘কালো সোনা’ হিসাবে বিবেচিত পেয়াজদানা ভালো হয়। কিন্তু এ বছর এখানে পেয়াজদানা আগের মতো ভালো হয়নি। ফলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন পেয়াজদানা চাষিরা। আর ধান ও বিভিন্ন সবজি করে শতভাগ লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা। ফসল হারিয়ে দিশেহারা কৃষকেরা বাধ্য হয়েই গত শনিবার জমিতে মানববন্ধন করেছেন।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, কয়েক বছর আগে অম্বিকাপুরে ফসলি জমিতে একটি ইটভাটা ছিল। তখন চাষিদের আন্দোলনেরমুখে ভাটাটি বন্ধ করে দেন মালিক। দুই বছর আগে মালিক কুদ্দুস ভাটাটি বিক্রি করে দিলে নতুন মালিক সেখানে ‘ওসমান অটো ব্রিকস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামে একটি ইটভাটা গড়ে তোলে। এ ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় দেড় থেকে দুই হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পেয়াজদানা চাষি আবু সাঈদ চৌধুরীসহ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, ইটভাটাটি চালু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। যেসব জমিতে পেয়াজদানার বাম্পার ফলন হতো, এ বছর আশানুরূপ ফলন হয়নি ভাটার ধোঁয়ার কারণে। একইভাবে পাটের ফলনও বিপর্যয় হয়েছে। কালো ধোঁয়ায় ভাটার আশপাশের তিন শতাধিক একর জমির ধান গাছের ওপরের অংশ পুড়ে যেতে শুরু করেছে। শুধু জমির ফসল নয়, কালো ধোঁয়ায় আশপাশের বিভিন্ন গাছের পাতা পুড়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে গাছের ফলও।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল বাশার জানান, ভাটার ধোঁয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে। কৃষকদের পাশাপাশি আমরাও বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভাটাটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উল্লেখ করে ওসমান অটো ব্রিকস ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মাসুদ রানা দাবি করেন, এমনটি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্য কোনো কারণে জমির ফসল নষ্ট হয়ে থাকতে পারে। যদি ভাটার কারণে ফসল নষ্ট হয় তবে তা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর