শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

৪ মাস বাড়িছাড়া কয়েক হাজার মানুষ, বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

দুই ইউনিয়নে বিরোধ

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরের কৃষ্ণনগর ও বীরগাঁও ইউনিয়নবাসীর বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ভয়ে চার মাস ধরে বাড়িছাড়া দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে কোনো কোনো এলাকা। বন্ধ এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মসজিদে মুসল্লি উপস্থিতিও কম। গেল রমজান মাস থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হলেও সমাধানে উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউ। জানা যায়, রমজান মাসে হাজির হাটি গ্রামের শাহজাহান মেম্বারের ছেলে সুমনের ওপর লেবাননে হামলা হয়। তার চোখ উপড়ে ফেলা হয়। এ ঘটনায় হাজিরহাটি গ্রামে শাহজাহান মেম্বার আর কাউসার মোল্লার গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। দফায় দফায় চলে হামলা-পাল্টা হামলা। এখন দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বার সবাই জড়িয়ে পড়েছেন দলাদলিতে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বাজারের দোকানপাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। থানাকান্দি বাজার থেকে বাইশমৌজা বাজার পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের ঘরবাড়ি এলোপাতাড়ি কোপানো হয়েছে। এসব এলাকায় কোনো পুরুষ নেই। সবশেষ গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে বীরগাঁও ইউনিয়নের আমতলী পূর্বপাড়ার দুই শতাধিক ঘরবাড়ি হামলা ভাঙচুর করা হয়। আগুন দেওয়া হয় কয়েকটি ঘরে। জানা যায়, আবু মেম্বারের গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান, শাহজাহান মেম্বার, হাবিব মোল্লা, মলাই সরকার, মিলন মিয়া, কলিম উদ্দিন এবং বীরগাঁও ইউনিয়নের জহির রায়হান ও লুত্ফুর রহমান। অপর গ্রুপে মুসলিম মেম্বারের সঙ্গে আছে সাতঘরহাটির কালা, আনোয়ার, ডাইনা গোষ্ঠী, থানাকান্দির হাতবাড়ি, বীরগাঁও আমতলির ফালুর নেতৃত্বে একটি অংশ, গৌরনগরের আজুইরাবাড়ি ও গাজিরকান্দি গ্রাম। এ সব গোষ্ঠীর নেতারা হচ্ছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাসুকুর রহমান, কাউসার মোল্লা, আব্বাস আলী, নোয়াব মেম্বার, মন মিয়া, স্বপন মিয়া, কবির, নাজমুল হক, নূরে আলম, আব্বাস, হোসেন, মাসুদ মোল্লা এবং বীরগাঁওর চেয়ারম্যান কবির আহমেদ। ইউপি নির্বাচনের বিরোধ জিইয়ে রাখতে বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানরা দুই দলে অবস্থান নেওয়ায় এলাকার পরিস্থিতির অবনতি হয়। প্রবাস থেকে দাঙ্গার জন্য কোটি টাকা ফান্ড তৈরি করা হয়। মাদ্রাসাশিক্ষক জাকির হোসাইন জানান, মসজিদ-মাদ্রাসায় ঠিকমতো আজান হয় না। মুসল্লি আসে না। আতঙ্কে মাদ্রাসায় যায় না ছাত্ররা। উত্তর লক্ষ্মীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের জেএসসি পরীক্ষার্থীরা জানায়, ভয়ে তারা স্কুলে ও প্রাইভেট পড়তে যেতে পারে না। হাজিরহাটি গ্রামের নেহারা বেগম জানান, রাতে ঘরে আগুন ধরাইয়া দেয়। তাই আমরা একত্রে এক ঘরে থাকি। নবীনগর থানার ওসি আসলাম সিকদার জানান, ‘এখন পর্যন্ত দুই ইউনিয়নে ১২টি খুন হয়েছে। কোনোটার বিচার হয়নি। পুলিশের নামে ব্যবসা করার জন্যই এগুলো হচ্ছে। যারা ব্যবসা করে তারাই ঘটনা জিইয়ে রাখছে।’

সর্বশেষ খবর