রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
টেংরাগিরি বনাঞ্চল

নষ্ট হচ্ছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ, বিপন্ন প্রাণিকুল

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি

নষ্ট হচ্ছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ, বিপন্ন প্রাণিকুল

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব ও বনদস্যুদের ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে টেংরাগিরি বনাঞ্চল। নষ্ট হচ্ছে সংরক্ষিত এ বনাঞ্চলের হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। বিপন্ন হচ্ছে প্রাণিকুল।

বনবিভাগ সূত্র জানায়, তালতলী উপকূলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিদ্রাসকিনা, নিশানবাড়িয়া ও নলবুনিয়ার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি টেংরাগিরি। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা টেংরাগিরি ১৯২৭ সালের আগে সুন্দরবনের অংশ ছিল। ১৯২৭ সালের বন আইন অনুযায়ী ১৯৬০ সালে এটিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৭ সালে এর নামকরণ করা হয় টেংরাগিরি বনাঞ্চল। ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর ৪ হাজার ৪৮ হেক্টর জমি নিয়ে গঠিত হয় টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। কেওড়া, গরান, গেওড়া, ওডা, জাম, ধুন্দল, সুন্দরী, বাইন, করমচা, বলই, তাল, কাঁকড়া, বনকাঁঠাল, রেইনট্রি, হেতাল, তাম্বুলকাটা প্রভৃতি শ্বাসমূলীয় গাছ হচ্ছে এ বনের প্রাণ। এই সংরক্ষিত বনে রয়েছে কাঠবিড়ালি, বানর, সজারু, শূকর, কচ্ছপ, শিয়াল, ডোরাকাটা বাঘ, বনমোরগ, মধু কাঁকড়া, বন্যগরু, মহিষ ও প্রায় ৪০ প্রজাতির সাপ। জলবায়ু পরিবর্তন ও বনদস্যুদের ছোবলে ধীরে ধীরে উজাড় হচ্ছে টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। দস্যুরা বনরক্ষীদের যোগসাজশে গহিন বনের গাছ কেটে যাচ্ছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্বাসমূলে বালু জমে আবার প্রচণ্ড ঢেউয়ে মাটি-বালু সরে গিয়ে মরে যাচ্ছে গাছ। সরেজমিনে বন এলাকায় গেলে স্থানীয় জেলেরা জানান— নিদ্রা, সখিনা, আশারচর, নলবুনিয়া বনসংলগ্ন গ্রামগুলোতে ২০-২৫ বনদস্যু গ্রুপ ও চোর চক্র রয়েছে। এরা বনরক্ষীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে গহিন বনের বড় বড় গাছ কেটে নিচ্ছে। তাছাড়া চার-পাঁচ বছর আগেও জোয়ারের পানি সাগরের কাছাকাছি থাকত। এখন তা সমগ্র বনাঞ্চলে ঢুকছে। এতে গাছের গোড়ার মাটি ক্ষয় হয়ে গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। তারা আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় সিডরে অসংখ্য গাছ মরে গেছে। তারপর আর চারা রোপণ করা হয়নি। সখিনা বিটের বিট কর্মকর্তা জাহিদ প্রামাণিক বলেন, ‘সাগর ভেঙে বনাঞ্চল ছোট হয়ে গেছে’। কাঠ চুরির সঙ্গে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কোনো যোগসাজশ নেই বলে দাবি তার। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আলমগীর কবির বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে অনিয়মিত বর্ষণ-অতিবর্ষণ হচ্ছে। ফলে নদীর ঊর্ধ্ব অববাহিকায় অধিকমাত্রায় ভূমি ক্ষয় হচ্ছে। এতে নদীর পাড়-তলদেশে ক্ষয় ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে সাগর মোহনায় অধিকমাত্রায় পলি জমছে। যা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের উদ্ভিদের জীবনচক্রের স্বাভাবিক পর্যায়াবর্তনকে সংক্ষিপ্ত করছে। পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র বলেন, ‘শ্বাসমূলীয় গাছ ও টেংরাগিরি বনাঞ্চল রক্ষায় বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানো হচ্ছে’।

 

সর্বশেষ খবর